ময়মনসিংহে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং, কমছে কীটনাশক ব্যবহার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ

ফসলের পোকা দমনে ময়মনসিংহের সব উপজেলাতেই কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি। বিশেষ করে ধানের জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। একই সঙ্গে কীটনাশকের টাকা বেঁচে যাওয়ায় কমছে তাদের উৎপাদন খরচও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে জেলার নান্দাইল, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া ও ভালুকাসহ ১৩ উপজেলায় আমন ধানের ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাখি বসার জন্য জমিতে ১৫-১৮ হাত দূরত্বে গাছের ডাল কিংবা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দেয়া হয়। এসব ডাল ও কঞ্চিতে বসে পোকা খায় ফিঙ্গে, শালিক, ময়না, গৌরীর মতো পাখি। এছাড়া রাতে ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে পেঁচা। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে না। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কমে গেছে অনেকাংশেই।

নান্দাইল কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এবার ২২ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার হেক্টরে ব্যবহার করা হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি। এ উপজেলার মামুনুর রশিদ মামলু নামে এক কৃষক জানান, পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগের পর তার জমিতে এখন আর তেমন কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। পাখিরাই পোকা খেয়ে কীটনাশকের কাজ করছে।

ফুলবাড়িয়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, এ উপজেলায় পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলতি আমন মৌসুমে এখানকার কৃষকরা পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। বর্তমানে এ অঞ্চলে কীটনাশকের ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে।

উপজেলার কৃষক আরফান আলী বলেন, আমরা পার্চিং পদ্ধতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমন করতে পারছি। এতে আমাদের অর্থ ও পরিশ্রম উভয়ই কমেছে।

ত্রিশালের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশাত মাহবুবা রহমান বলেন, আমরা পার্চিং পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করেছি। তারাও এতে উৎসাহী হয়েছেন। ফলে কীটনাশক ব্যবহার অনেকাংশেই কমে এসেছে। একই কথা জানান নান্দাইল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হারুন রশিদও।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মাজেদ বলেন, কীটনাশক ছাড়াই পোকামাকড় দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। কৃষকরা সাশ্রয়ে আবাদ করতে পারছেন। এছাড়া রাতে আলোর ফাঁদ পেতেও পোকা দমন বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উভয় পদ্ধতিতেই ময়মনসিংহের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন