অক্টোবরে ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই দুই বছরের সর্বনিম্নে

বণিক বার্তা ডেস্ক

একের পর এক সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পাশাপাশি গত মাসে দেশটির কারখানা কার্যক্রমেও অবনতি দেখা গেছে। গতকাল প্রকাশিত এক বেসরকারি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন কার্যাদেশ ও উৎপাদনের মন্থরগতির কারণে অক্টোবরে ভারতের কারখানা কার্যক্রম হ্রাস পেয়ে দুই বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ভারত সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন রুপিতে পৌঁছেছে, যা মোট বাজেটের ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ। এদিকে পরিস্থিতি উন্নয়নে মুদ্রানীতি আরো প্রশমিত করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর লাইভমিন্ট, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

৪০০ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের উপর জরিপটি পরিচালনা করে আইএইচএস মারকিট। জরিপ অনুসারে, অক্টোবরে ভারতের মৌসুমভিত্তিক সমন্বিত ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) হ্রাস পেয়ে ৫০ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা দুই বছরের সর্বনিম্ন। সেপ্টেম্বরে পিএমআই ছিল ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। ৫০ পয়েন্টের সীমার মধ্যে থাকায় গত মাসে দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং খাত অল্পের জন্য সংকোচন এড়াতে পেরেছে বলে এক বিবৃতিতে বেসরকারি সংস্থাটি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, পিএমআই ৫০ পয়েন্টের উপরে থাকলে কারখানার কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও নিচে থাকলে সংকোচন বোঝায়। নতুন কার্যাদেশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, সরবরাহকারীদের ডেলিভারির সময় ও স্টক লেনদেন পর্যালোচনার মাধ্যমে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ বৈশ্বিক ব্যবসা আস্থা, বিনিয়োগ ও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করায় ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতেও এর প্রভাব পড়েছে।

এদিকে গত মাসে ভারতে মূলধনি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ালেও ভোক্তাপণ্যের প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়েছে বলে বিবৃতিতে আইএইচএস মারকিট জানিয়েছে।

অক্টোবরে নতুন কার্যাদেশের উপসূচক হ্রাস পেয়ে ৫১ দশমিক ৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৭ সালের অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। সেপ্টেম্বরে উপসূচক ছিল ৫২ দশমিক ৩ পয়েন্ট। ফলে গত মাসে দেশটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিও ছয় মাসের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এদিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত স্টক ধরে রাখার অনীহার পাশাপাশি লেনদেনেও অবনতি দেখা গেছে। সামগ্রিকভাবে অক্টোবরে ভারতের ব্যবসা আস্থা হ্রাস পেয়ে আড়াই বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে গত মাসে ভারতে চার বছরের মধ্যে প্রথমবার ইনপুট ব্যয়ে পতন দেখা গেছে, যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার আরেকটি আভাস।

আইএইচএস মারকিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ পলিয়ান্না দে লিমার মতে, অক্টোবরের পিএমআই পরিসংখ্যান মূলত ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অব্যাহত পতনকেই নির্দেশ করছে। তিনি বলেন, চাহিদার দুর্বলতা দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং খাতেডমিনো ইফেক্ট তৈরি করেছে। এ ধারাবাহিকতায় উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসা আস্থা সব কিছুতেই পতন ঘটছে।

এদিকে মন্দা রোধে ভারত সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গত মাসেই পঞ্চমবারের মতো রেপো রেট কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। প্রবৃদ্ধি জোরদারে চলতি বছর সব মিলিয়ে ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে আরবিআই। এ মুহূর্তে আরবিআইয়ের রেপো রেট ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। এর আগে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়া রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ সুনীল কুমার সিনহা বলেন, মূল্যস্ফীতি মধ্যমেয়াদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকায় ডিসেম্বর নাগাদ মুদ্রানীতি আরো এক দফা শিথিল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন