ওপেকের সদস্য হচ্ছে ব্রাজিল?

বণিক বার্তা ডেস্ক

বাজার চাঙ্গা রাখতে কয়েক বছর ধরেই নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের উৎপাদক রফতানিকারকদের সংগঠন ওপেক। তা সত্ত্বেও মূল্যপতন ঠেকাতে পারছে না সংগঠনটি। পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে অন্তত দুটি দেশ সদস্য পদ প্রত্যাহার করেছে। তবে নতুন সদস্য হিসেবে ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে বেশ আশাবাদী ওপেকের শীর্ষ উৎপাদক কার্যত নেতা সৌদি আরব। কারণ ওপেকে যোগ দিলে ব্রাজিল হবে সংগঠনের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদক। তখন জ্বালানি তেলের বাড়তি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলকে রাজি করানো গেলে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। খবর রয়টার্স।

গত বুধবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হেয়ার বলসোনারো বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ওপেকে যোগ দেয়ার ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, ব্রাজিল ওপেকের সদস্য হোক। রিয়াদে অনুষ্ঠিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-২০১৯ সম্মেলনে কথা বলেন বলসোনারো।

ব্লুমাবর্গ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই সৌদি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলসোনারোকে ওপেকে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। সে বৈঠকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ছিলেন। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব ছিল না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শেল উৎপাদন রফতানি যে হারে বাড়ছে, তাতে ওপেকের একার পক্ষে আর জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য ব্রাজিলের মতো উৎপাদন রফতানিকারক দেশ সদস্য হলে ওপেকের জন্য বেশ সুবিধাই হবে।

তবে ব্রাজিলের ওপেকে যোগদান শুধু প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে না। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হলে তাকে দেশের মন্ত্রিপরিষদ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

ব্রাজিল যদি শেষ পর্যন্ত ওপেকে যোগ দেয়, তাহলে সংগঠনের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদন দেশ হবে। প্রথম দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব ইরাক। ব্রাজিলের পরই থাকবে সংযুক্ত আরব আমিরাত কুয়েতের মতো দেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে ওপেক থেকে বের হয়ে যাওয়া যোগ দেয়া যেকোনো দেশের চেয়ে ব্রাজিল বড় উৎপাদক। একুয়েডর ২০২০ সালে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি বছর বেরিয়ে গেছে কাতার। ২০১৭ সালে যোগ দিয়েছে ইকুইটরিয়াল গিনি এবং গত বছর সদস্য হয়েছে কঙ্গো।

এদিকে ব্রাজিলের জ্বালানি তেল উৎপাদন খুব দ্রুত বাড়ছে। উপকূলে নতুন নতুন তেলক্ষেত্র থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ চলছে। এনার্জি আসপেক্টের হিসেবে, গত আগস্টে ব্রাজিলের উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দৈনিক লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল (বিপিডি) বেড়ে ৩১ লাখ দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির এযাবত্কালের সর্বোচ্চ। এছাড়া অপরিশোধিত তেল উৎপাদনও বেড়েছে। গত আগস্টে উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় লাখ ২০ হাজার বিপিডি বেড়ে ২৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল হয়েছে।

ওপেকের মাসিক তেলের বাজার প্রতিবেদন (এমওএমআর) অনুযায়ী, আগস্টে ব্রাজিলের ২৯ লাখ ৯০ হাজার বিপিডি উৎপাদন ছিল এযাবত্কালের সর্বোচ্চ।

ওপেকের হিসাবে, চলতি বছর ওপেক বহির্ভূত দেশ থেকে সরবরাহ প্রবৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকবে ব্রাজিল। আগামী বছরও ধারা অব্যাহত থাকবে। শীর্ষে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

ওপেক ওপেক প্লাস বহির্ভূত দেশ থেকে অব্যাহতভাবে সরবরাহ বাড়ার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে ওপেকের উৎপাদন রফতানি হ্রাসের উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। এখন ব্রাজিল সংগঠনে যোগ দিলে নিঃসন্দেহে দেশটির কাছ থেকে কিছু একটা আশা করবে ওপেক। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির অংশীদারিত্ব ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে।

অবশ্য ব্রাজিলের জ্বালানি তেল শিল্পের হর্তাকর্তারা দেশটির ওপেকে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন