[পূর্ব প্রকাশের পর]
গণিত ভাবনা ১১: জ্যোত্স্নায় তবু সে দেখিল কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
গণিত ভাবনা নিয়ে পর্বগুলো লেখা শুরুর পরে ফেসবুকে পোস্টের আকারে তা প্রকাশ শুরু করেছিলাম। পাঠকের কাছ থেকে এ নিয়ে অনেক প্রশংসাসূচক মন্তব্য পেয়েছি। তবে যে প্রসঙ্গ বারবার ঘুরেফিরে এসেছে, তা হলো গণিতভীতির কথা। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, লেখাগুলো পড়ে গণিত বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে, গণিতভীতি কমে যাচ্ছে। এ রকম মন্তব্য আমার জন্য ছিল আনন্দের ও অনুপ্রেরণার।
কিন্তু এ গণিতভীতির কথাটা আমাকে ভাবিয়েছে। কেন এ গণিতভীতি, আর এ গণিতভীতিটাইবা কী জিনিস? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলার চেষ্টা করব এ পর্বে।
গণিতভীতি নিয়ে এ ভাবনার সূত্রে আমার জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে গেল, যা ব্যবহার করা হয়েছে এ পর্বের শিরোনামে—‘জ্যোত্স্নায় তবু সে দেখিল কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?’ আমি
নিজেও ভেবে দেখলাম, আমি মাঝে মাঝে যে দুঃস্বপ্নগুলো দেখি, প্রধান কাহিনী হলো পরীক্ষা দেয়া এবং সে পরীক্ষা হলো অংক পরীক্ষা। দুঃস্বপ্নগুলোয় আমি দেখি যে কয়েক দিন পরই অংক পরীক্ষা দিতে হবে, অথচ আমার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। আমি সেই ভাবনায় স্বপ্নে আতঙ্কগ্রস্ত হই। এমনও হয় আতঙ্কে আমার ঘুমে ভেঙে যায়। আবার আমি নিজেকে স্বপ্নের মধ্যে আশ্বস্ত করি যে, এসব পরীক্ষা আমার আগেই দেয়া হয়ে গেছে, তাই আসলে এগুলো স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না।
মানুষ স্বপ্ন কেন দেখে, তার অনেক রকম ব্যাখ্যা আছে। আমার কাছে মনে হয়, আমি যখন দৈনন্দিন কাজ শেষ করার জন্য সময়ের অভাব অনুভব করি, তখনকার দুশ্চিন্তাগুলো স্বপ্নে পরীক্ষা হয়ে প্রকাশ পায়। আমি আরো জানি, পরীক্ষার স্বপ্ন আমার মতো অনেকেই দেখেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে অংক পরীক্ষা কেন? তাহলে কি আমারও আছে গোপন অংকভীতি?
আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমার ছাত্রজীবনে গণিতভীতির কোনো উদাহরণ নেই। পরীক্ষায় ভালো-খারাপ যা-ই করেছি, গণিত নিয়ে দুশ্চিন্তা কখনই ছিল না। আমার অনেক সহপাঠীকে দেখেছি অংকের নোট খাতা বানিয়ে মুখস্থ করতে। আমি এগুলো কখনই করিনি। কিন্তু অন্য সবার মতোই গণিত পরীক্ষায় ভালো করার চাপ অনুভব করেছি। দেখা যেত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্য আরো বিষয় থাকা সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ সময়ে পড়াশোনা করেছি গণিত নিয়ে। সময়ের অভাব সবসময় অনুভব করেছি গণিত বিষয়ে। তাই হয়তো স্বপ্নে সময়ের অভাব গণিত পরীক্ষার রূপে প্রকাশ পাচ্ছে।
তার মানে আমি যে গণিত নিয়ে পরীক্ষার স্বপ্ন দেখছি, তা গণিতভীতি থেকে আসেনি; বরং এসেছে গণিতে ভালো করা মানে নাম্বার পাওয়ার মানসিক চাপ থেকে। সেই থেকে অন্যদের গণিতভীতি নিয়ে আমার অনুমান, এ ভীতিটা মূল উৎস গণিত পরীক্ষায় ভালো করার চাপ। আর কে না জানে, গণিতে বেশি নম্বর না পেলে স্কুলে ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া অসম্ভব ব্যাপার।
আমাদের সময়ে স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার মূল লক্ষ্য ছিল পরীক্ষায় ভালো করা। কে আসলে কি শিখল না-শিখল তা নিয়ে মাথাব্যথা কমই ছিল। মাধ্যমিক পর্যন্ত গণিতে শুধু অনুশীলনীগুলো করানো হতো। অনুশীলনীর আগে সেই অধ্যায়গুলোয় গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা ও আলোচনা থাকত। আমি নিজের আগ্রহে ওগুলো মাঝে মাঝে পড়তাম। কিন্তু হাতেগোনা হয়তো দু-একবার তা শ্রেণীকক্ষে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু শুধু পরীক্ষার জন্য লেখাপড়া, সেই সুযোগে অনেকে গণিত তেমন কিছু না বুঝেও শুধু অনুশীলনীর সমাধানের