বিমানের বহর বড় হচ্ছে, সক্ষমতা অব্যবহূত থাকছে

পরিচালন দক্ষতা বাড়ানো দরকার

বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইনস ব্যবসায় প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে। ভারতের সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার লোকসানের পাল্লা বাড়ছে। শুধু তা- নয়, বেশকিছু বেসরকারি এয়ারলাইনস ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে এরই মধ্যে। কোনো কোনো দেশ বিমান ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে অনেক বুঝে। খ্যাতনামা এয়ারলাইনসগুলোও আছে চ্যালেঞ্জে। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান চলছে ঠিক এর বিপরীত পথে। বিপুল অংকের ঋণে কেনা হচ্ছে একের পর এক বোয়িং। সেগুলোর অধিকাংশেরই সক্ষমতার পরিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং উড়োজাহাজগুলো দিনে ১৫ ঘণ্টা ওড়ার পরিবর্তে ১৮ ঘণ্টাই বসে থাকছে। এতে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। হজ ফ্লাইট চালাতে আগামী তিন বছরের জন্য দুটি বড় আকারের উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিমান। এদিকে ডিসেম্বরে দুটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ যুক্ত হলেও বিমানের রুট থাকবে আগের মতো। সেক্ষেত্রে বহরের ছয়টি ড্রিমলাইনারের ফ্লাইং আওয়ার আরো কমে যাবে। অব্যবহূত সক্ষমতার পরিমাণ আরো বাড়লে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়বে বিমানের।

বস্তুত বিমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। সংস্থাটির নেই সেবার মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াস। ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চান না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। এদিক থেকেও বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইনসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ। অতীতে জনবল কমিয়ে আনা, বিদেশীদের সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

অব্যাহত লোকসানের মুখে থাকা বিমান বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার অবসান ঘটাতে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী ভারতের রাষ্ট্রীয় সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে সে দেশের উদ্বিগ্ন সরকার নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটাতে বিলম্ব করেনি। অথচ বাংলাদেশে এটা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। যে নেতৃত্ব অসফল, তারা টানা পাঁচ বছরের পর আবারো জেঁকে বসেছে। ২০০৮ সালে বোয়িং কোম্পানি মূলত তাদের স্বার্থেই উড়োজাহাজ প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি উত্তম ব্যবসার পরিকল্পনা দিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল, বিমান বহর ঠিকঠাক চালাতে না পারলে হয়তো বাংলাদেশ কিস্তি দিতে পারবে না। তাদের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়নি।

বিচক্ষণরা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগান। কিন্তু বিমান করে উল্টোটা। অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় না। যাচাই-বাছাই ভবিষ্যৎ লাভ-লোকসানের হিসাব না করে কর্তৃপক্ষের একমুখী সিদ্ধান্ত সংস্থাটির দায় বাড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মূলধনের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতেও রয়েছে। তাই নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেয়া বা কেনা হলে আর্থিক চাপও বাড়বে। বিমান কর্তৃপক্ষ যদি সক্ষমতা অনুযায়ী তা কাজে লাগিয়ে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে পারে, তবেই তা লাভজনক হতে পারে। বিমানের লম্বা দূরত্বের রুট মধ্যপ্রাচ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ। কারণে বিমান কর্তৃপক্ষকে রুট সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। লম্বা দূরত্বে ফ্লাইট চালুর বিদ্যমান জটিলতা নিষ্পত্তির পরই নতুন উড়োজাহাজ ক্রয় বা লিজ নেয়ার বিষয়টি অধিক গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া দীর্ঘ রুটের উড়োজাহাজ দিয়ে স্বল্প মাঝারি দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনা সক্ষমতা ব্যবহার অপরিণামদর্শিতারই পরিচয়।

বিমানকে যদি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হয়,

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন