গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণের দৌড়ে এগিয়ে চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

গভীর সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান খনিজ। বহু দেশই এ খনিজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে আন্তর্জাতিক আইনে বিধিনিষেধ থাকায় বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ দৌড়ে এগিয়ে আছে চীন। আগামী বছর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের (আইএসএ) খসড়া আইন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলে সমুদ্রের তলদেশের খনিজ উত্তোলক প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়বে চীন। আর এ সম্ভাবনা বেশ প্রবল বলেই জানিয়েছেন খোদ সংস্থাটির প্রধান মাইকেল লজ। খবর রয়টার্স।

স্মার্টফোন ও বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণে নিকেল, কপার, কোবাল্ট ও ম্যাঙ্গানিজের মতো ধাতুর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ ধরনের ধাতুর খনিজকে বিরল মৃত্তিকাও (রেয়ার আর্থ) বলা হয়। আর এ বিরল মৃত্তিকার ব্যবসায় এখনো চীনের একক আধিপত্য। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এসব ধাতুর নতুন নতুন উৎসের খোঁজে নেমেছে বেশ কয়েকটি দেশ।

গভীর সমুদ্রতল হলো বিরল মৃত্তিকার বিশাল ভাণ্ডার। সমুদ্রতলে যে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে গঠিত বিশেষ পিণ্ড পাওয়া যায়, সেটিতে বিরল মৃত্তিকার প্রায় সব উপাদানই পাওয়া যায়। এ খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণ প্রযুক্তির দিক থেকে চীন এরই মধ্যে বহুদূর এগিয়েছে।

জাতিসংঘের সমুদ্রের তলদেশ কর্তৃপক্ষ বা আইএসএ সামুদ্রিক খনিজ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে ৩০টি চুক্তি সম্পাদন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুক্তি হয়েছে চীনের সঙ্গে, পাঁচটি।

জাতিসংঘের সমুদ্র আইনের ভিত্তিতে সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্যই গঠিত হয়েছে আইএসএ। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সমুদ্রতলের খনিজ আহরণ আইন প্রণয়নের কথা রয়েছে।

আইএসএর মহাসচিব মাইকেল লজ বলেন, আমার বিশ্বাস, সমুদ্রতলের খনিজ আহরণে চীনই হবে প্রথম। এ খনিজের চাহিদা এখন ব্যাপক এবং চাহিদা বাড়ছেই। সুতরাং খনিজটির বাজার নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অতি সম্প্রতি চীন সফর করেছেন তিনি।

সামুদ্রিক খনিজ সংগ্রহে বেলজিয়াম, ব্রিটেন, জার্মানি ও পোল্যান্ডও এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকেও একাধিক দেশ এ নিয়ে বেশ উৎসাহী।

তবে এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি যে, গভীর সমুদ্রতল থেকে খনিজ সংগ্রহ সাশ্রয়ী হবে। তাছাড়া একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আগামী বছরের মধ্যেই খনিজ সংগ্রহ আইনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।

আগামী বছরের জুলাইয়ে সমুদ্র খনিজ আহরণ আইন প্রণয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে লজ বলেন, আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। বর্তমান খসড়াটি প্রায় সম্পূর্ণ বলেই মনে হয়।

আরেকটি ইস্যু এখনো সমাধা হয়নি, সেটি হলো জাতীয় জলসীমার বাইরে থেকে খনিজ আহরণ করলে আইএসএকে প্রদেয় হিস্যা কত হবে।

এ ব্যাপারে লজ বলেন, আমরা খনিজ উত্তোলন অব্যবহিত মূল্যের ভিত্তিতে একটি হিস্যা (রয়্যালটি) নির্ধারণের চেষ্টা করছি। এটি ৪ থেকে ৬ শতাংশের মাঝামাঝি হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে এটি বাড়বে।

প্রসঙ্গত, কানাডার নটিলাস মিনারেলস পাপুয়া নিউগিনির কাছে নিজস্ব জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশ থেকে তামা ও স্বর্ণ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার আগেই প্রতিষ্ঠানের মূলধন ফুরিয়ে যায়। গত বছর প্রতিষ্ঠানটিকে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।

অবশ্য এ অভিজ্ঞতা অন্যদের হতোদ্যম করতে পারেনি। গ্লোবাল সি মিনারেল রিসোর্সেস (জিএসআর), বেলজিয়ামের ডেমে এবং কানাডার ডিপগ্রিন নানা প্রযুক্তির পরীক্ষা ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে গত জুলাইয়ে পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রিনপিস গভীর সমুদ্রতলের খনিজ আহরণের সাগর-মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রে সম্ভাব্য ক্ষতি যাচাইয়ের আগ পর্যন্ত সব ধরনের অনুসন্ধান তত্পরতা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তবে আইএসএ তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন