বাংলাদেশ বিনির্মাণ

ড. কাজী খালিদ আশরাফ

আধুনিক স্থাপত্যচর্চার ইতিহাসে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করতেই হয়। বিশেষ করে আধুনিক স্থাপত্যচর্চার মধ্যযুগে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যদিও এর বিস্তারিত কোনো বর্ণনা সচরাচর কোথাও পাওয়া যায় না। এমনকি, আধুনিক স্থাপত্যচর্চা শুরুর আগেও বঙ্গীয় অঞ্চলের মাটি থেকেই উত্থিত হয়েছে স্থাপত্য বা বসতি নির্মাণের একটি উল্লেখযোগ্য ধারা, যাবাংলোনামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে বাসস্থান নির্মাণের কলা হিসেবে সারা বিশ্বে বিশেষ ধরনটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বাংলো নির্মাণ এর প্রসার ঘটেছে পুরো ঊনবিংশ শতাব্দীজুড়েই। বাংলো মূলত বাংলাদেশের গ্রামীণ ঘরবাড়ি তৈরির মূলধারার ইংলিশ সংস্করণ। বাংলার গ্রামীণ বাসস্থানকে আঞ্চলিক জলবায়ু অনুকূল স্থাপত্যের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করে ইংরেজরা একে অন্তর্ভুক্ত করেছিল তাদের নিজেদের চর্চায়। সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি পরিবেশের এক সমন্বয় হিসেবে বাংলার কুঁড়েঘর উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুতে টিকে থাকার জন্য একটা আদর্শ আশ্রয়। বাংলার কুঁড়েঘরের ক্ষুদ্র পরিসর থেকেই আশ্রয় নির্মাণে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে। এই প্রারম্ভিকতাই পরে ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্থাপত্যকলার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা জলবায়ুর অনুকূলতায় স্বস্তি স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বলে।

বাংলাদেশে আধুনিক স্থাপত্যচর্চার শুরুতে, আধুনিক স্থাপত্যের পথিকৃৎ স্থপতি মাজহারুল ইসলামের (১৯২৩-২০১২) হাতে উত্তর-ঔপনিবেশিককালে প্রথম জাতীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জলবায়ুর সঙ্গে প্রাণী পরিবেশের মেলবন্ধন, ক্রান্তীয় জলবায়ুর সঙ্গে মানানসই বসবাস নীতি এবং আশ্রয় বা বসতির উপযোগিতাবাদ, এগুলোই ছিল তার কাজের মূল বিবেচ্য বিষয়।

মাজহারুল ইসলাম আরো কজন স্থপতির উদ্যোগে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্থাপত্যচর্চায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে, যা পঞ্চাশ ষাটের দশকে বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল এবং এর অনেক উদাহরণ দেখা যায় কনস্টান্টিন ডক্সিয়াডিস, পল রুডলফ, স্ট্যানলি টাইগারম্যান, রিচার্ড নিউট্রা, রবার্ট বৌহির কাজে। স্থাপত্যচর্চায় টেকসই নীতির শুরু এখান থেকেই। সূর্যরশ্মির আপতন কোণ, বাতাসের গতিপথ, তাপমাত্রার সহনীয়তা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে আবহাওয়া, প্রাণী পরিবেশ এবং এদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে স্থাপত্যচর্চা সম্ভব, এই নীতির মধ্য দিয়েই স্থাপত্যেআঞ্চলিকতাবাদবারেজিয়োনালিজম’-এর আবির্ভাব। স্থাপত্যে আধুনিকতাবাদের চর্চা বিবর্তনে চণ্ডীগড়ের পরেই ঢাকার নাম উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে লুই কান ছিলেন সঞ্চালকের ভূমিকায়। আধুনিকতাবাদ নিয়ে কিছু প্রচলিত সংস্কারভূগঠন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন