অন্যান্য শিল্পকর্মের
তুলনায় একটি
স্থাপত্যকর্মের আয়ু
সাধারণত দীর্ঘতর,
তাই অন্যান্য
শিল্পমাধ্যমের তুলনায়
স্থাপত্যে পরিবর্তন
আসে অনেক
ধীরগতিতে। এই
পরিপ্রেক্ষিতে বিচার
করলে আধুনিক
স্থাপত্যের উদ্ভব
এবং বিশ্বজুড়ে
দ্রুত বিস্তার
স্থাপত্যের ইতিহাসে
একটি চমকপ্রদ
ঘটনা। কারণ
উত্তর আমেরিকা
ও পশ্চিম
ইউরোপে ঊনবিংশ
শতকের শেষ
প্রান্তে এসে
মাত্র কয়েক
দশকের মধ্যে
এই নতুন
স্থাপত্যশৈলী কয়েক
সহস্রাব্দের স্থাপত্য
সংস্কৃতিকে বদলে
দেয়।
উত্তর
আমেরিকা ও
পশ্চিম ইউরোপে
ঊনবিংশ শতকে
শিল্প বিপ্লবের
প্রভাবে ঘটে
দ্রুত নগরায়ণ,
ইট-পাথরের
বিকল্প শিল্পজাত
নির্মাণ উপকরণ
স্টিল, কংক্রিট,
কাচ সুলভ
ও সহজলভ্য
হয়ে যায়,
বহুতল ভবন,
কলকারখানা, রেলস্টেশন
ইত্যাদি নতুন
ধরনের ভবন
নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা
দেখা যায়,
সেই সঙ্গে
পুরনো রীতিনীতির
অন্ধ অনুসরণ
করাকে প্রশ্নবিদ্ধ
করে যুক্তিবাদ,
বিজ্ঞানমনস্কতা এবং
আধুনিকতা, সেই
সঙ্গে গড়ে
ওঠে নব্য
ধনিক এবং
মধ্যবিত্ত শ্রেণী।
বিশ শতকের
শুরুতে প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের নৈরাজ্য
কাটিয়ে উঠে
বিজ্ঞানসম্মত ভাবনা
এবং প্রযুক্তির
সমন্বয়ে নতুন
পৃথিবী গড়ার
স্বপ্ন দেখে
মুক্তিকামী মানুষ।
আধুনিক স্থাপত্যের
জন্ম এই
জটিল যুগ
সন্ধিক্ষণে।
প্রায় তিন সহস্রাব্দ ধরে স্থাপত্যের মূল উপকরণ ছিল দৃঢ়, অনড়, নিরেট ইট-পাথরের দেয়ালে গড়া কাঠামো। শিল্প বিপ্লব এনে দেয় লোহা, কাচ আর কংক্রিট, যা দিয়ে গড়া গেল উন্মুক্ত, নির্ভার ভবন। তবে শুধু নতুন উপকরণ ও প্রযুক্তির কারণেই যে বাহ্য অবয়বগত বিশাল পরিবর্তন এসেছিল তা নয়। আধুনিক স্থাপত্যরীতির সঙ্গে সনাতন স্থাপত্যের পার্থক্য বাহ্য অবয়ব বা ফর্মে নিরলংকার, নিরাভরণ বিশুদ্ধ জ্যামিতিক আকার নিয়ে আধুনিক স্থাপত্যের বিন্যাস। আধুনিক স্থাপত্যের আবশ্যিক লক্ষণ হলো ব্যবহার উপযোগিতা বা ফাংশনালিটি অনুযায়ী বাহ্য অবয়ব বা ফর্ম নির্বাচন করার স্বাধীনতা। আধুনিক স্থাপত্যের মূলমন্ত্র ‘ফর্ম ফলজ ফাংশন’। এই স্থাপত্যরীতির মূলে ছিল মার্কিন স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের (১৮৬৭-১৯৫৫) পরিসর বা স্পেস নিয়ে নতুন ভাবনা: বিশ শতকের গোড়ায় শিকাগোতে তার প্রেইরি বাড়িগুলোতে আয়তাকার ঘরের সীমানা ভেঙে দিয়ে তিনি উন্মুক্ত খোলামেলা পরিসরের বাধাহীন প্রবাহকে প্রাধান্য দিলেন। উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রগতিশীল স্থপতিরা সেই সময় সন্ধান করছিলেন আধুনিক যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি স্থাপত্যশৈলীর। এই সন্ধান বেগবান হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সমকালীন বিমূর্ত