ইমারতের সংরক্ষণ

ড. কাজী আজিজুল মাওলা

স্থাপত্য সংরক্ষণ মানে শুধু ঐতিহাসিক সাক্ষ্যসাবুদের সংরক্ষণ নয়; উপরন্তু সাংস্কৃতিক তাত্পর্য এবং এলাকা, পরিবেশ, স্মৃতিস্তম্ভ, ইমারত জীবন্ত জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অন্তর্নিহিত মূল্য ধরে রাখার প্রচেষ্টাও বটে। সংরক্ষণ চর্চা ইমারত নির্মাণ কর্মকাণ্ড সূচনার কাছাকাছি পুরনো এবং শহরের অস্তিত্বের সমান্তরালে তা যূথবদ্ধভাবে বজায় থেকেছে। ইউরোপে সংরক্ষণ শুরু হয় খ্রিস্টীয় ষোল শতকে, যখন উৎসাহনা-প্রণোদনা দিকনির্দেশনার জন্য মানবতাবাদীরা (হিউম্যানিস্ট) গ্রিক রোমান উত্তরাধিকারের দিকে ফিরে তাকিয়েছিল। শিল্প বিপ্লব এবং দুই বিশ্বযুদ্ধের ফলে ঐতিহাসিক স্থাপনা ইমারত এবং বিদ্যমান ভূদৃশ্যের নজিরবিহীন নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ সংরক্ষণের আন্দোলন জোরদার হয়েছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংরক্ষণের সর্বজনীন দায়িত্বের ধারণাটি প্রচারে ইউনেস্কো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের বিভাজনের পর পূর্ব বাংলা তত্কালীন পাকিস্তানের অংশ ছিল এবং এটি বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১ সালে। পূর্ব বাংলা ছিল একটি নবসৃষ্ট প্রদেশ, যার রাজধানী ঢাকা। তবে এটি এমন এক রাজধানী ছিল যেখানে আপাত অর্থে কোনো অবকাঠামো স্থাপনা ছিল না। ইমারতের নকশা প্রণয়নের বিরাট কাজটি পরিপালনে এখানে ছিল না পর্যাপ্তসংখ্যক স্থপতি। নিজস্ব পেশায় নিয়োজিত অল্পসংখ্যক স্থানীয় বা দেশীয় স্থপতি ছিল কাজের চাপে ভারাক্রান্ত। সম্ভবত ছদ্মবেশে এটি ছিল এখানকার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। শূন্যতা পূরণে যুদ্ধোত্তর আধুনিকতাবাদী স্থপতিরা আসা শুরু করেছিল এবং তারা স্থাপত্যে শৈলীগত পদ্ধতিগত প্রবণতার সেতুবন্ধ রচনা করেছিল। সংকট উত্তরণে কিছু পশ্চিমা স্থপতিকে পুনর্গঠন বা উন্নয়নকর্মে নিয়োগ করা হয়েছিল। পশ্চিমা কিছু স্থপতি এসেছিলেন আর্থিক সহায়তা নিয়ে, যা দেয়া হয়েছিল নবসৃষ্ট প্রদেশে। এসব স্থপতির অধিকাংশই ১৯৫০ থেকে ১৯৬৯ সালের এই ২০ বছর সময় মেয়াদে কাজ করেছিলেন। তখন স্থাপত্য শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান (বর্তমানে বুয়েট) ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল স্থানীয় স্থপতিদের প্রশিক্ষণের জন্য, যারা উদীয়মান ইমারত শিল্পের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিতে পারে। অগ্রণীরা আধুনিকতাবাদী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী কিংবা ওই ঘরানার হওয়ায়, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানেও স্থাপত্য পঠন-পাঠনে আধুনিকতাবাদী প্রবণতা অনুসরিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যবহারিক অর্থে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা স্থপতিরা নিজেদের পেশায় সক্রিয় হয়েছিল। বিভিন্ন দিক থেকে ১৯৫০ থেকে ১৯৬৯ এই সময় ছিল বাংলাদেশের মুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব। বাংলাদেশে সমকালীন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন