বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতির ইঙ্গিতে চাঙ্গা এশিয়ার শেয়ারবাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলমান বাণিজ্য বিবাদ নিয়ে মার্কিন-চীন আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি ও চলতি সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের আরেক দফা প্রণোদনা পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ওয়াল স্ট্রিট। এরই জেরে গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজার তিন মাসের শীর্ষে পৌঁছায়। খবর রয়টার্স।

জাপানের নিক্কেইয়ের সূচক বাড়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক স্থিতিশীল ছিল। জাপানের বাইরে এশিয়া প্যাসিফিকের এমএসআইসি বিস্তৃত সূচক বাড়ে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যা জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের পর সর্বোচ্চ। এসঅ্যান্ডপি-৫০০-এর ই-মিনি ফিউচারস বাড়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচারস কমে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি আশা করছেন শিগগিরই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে সই করতে পারেন। কিন্তু কবে করবেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজারও জানিয়েছেন, ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক স্থগিত করেছিল, তার সময়সীমা চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। স্থগিতাদেশ বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের সিনিয়র এফএক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট রদ্রিগো ক্যাটরিল বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতিকে বাজার ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। ডিসেম্বরে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কারোপের কথা রয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, এটি একটি বিশাল অনুমান, কেননা যদি সমঝোতা না হয়, তবে বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা সহজেই ভেস্তে যেতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি-৫০০-এর সূচক বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে ডাও জোনস বাড়ে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং নাসডাক ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্রুতই বাণিজ্যযুদ্ধে ইতি ঘটনার সম্ভাবনা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বাণিজ্যযুদ্ধ যেমন দেশ দুটির অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। এ অনিশ্চিত পরিস্থিতির তীব্রতা বাড়িয়েছে ব্রেক্সিট। এসবের প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারের ওপর। এ সমস্যাগুলো সমাধানের পথ পেলে বৈশ্বিক শেয়ারবাজার বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে অ্যামাজনকে হটিয়ে পেন্টাগনের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি ডলারের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি পাওয়ার পর মাইক্রোসফট করপোরেশনের শেয়ারের দাম বাড়ে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তবে ধারণা অনুযায়ী আয় করলেও ত্রৈমাসিক মুনাফা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় কম হওয়ায় নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডের শেয়ারের দামে পতন হয়।

আজ বুধবার ফেড আবার সুদহার কমাবে কিনা সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন বন্ড বিনিয়োগকারীরা। তবে তারা এও সন্দেহ করছেন, হয়তো এর পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ফেড।

জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলছেন, আমরা ধারণা করছি ডিসেম্বরে আবার সুদহার কমাতে পারে ফেড, যদিও চলতি সপ্তাহে ফেড কিছুটা কঠোর থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, খোলাখুলি না বললেও ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (এফওএমসি) চলতি বছর আরেক দফা প্রণোদনা পদক্ষেপ গ্রহণের পথ উন্মুক্ত রাখবে।

চলতি সপ্তাহে জাপান ও কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বৈঠকে বসবে। পরিস্থিতি সামলাতে এরা হয়তো সুদহার আরো কমাতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন