রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় ঋণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা এ মুহূর্তে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের মুখ্য উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রান্তীয় সমীক্ষায়। খবর সিনহুয়া।
বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে বাজার অস্থির
হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৭৫ শতাংশ মার্কিন বিনিয়োগকারী। তবে
চলমান পরিস্থিতিতে ৫৯ শতাংশ নিজেদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন। ২৩
শতাংশ বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও) থেকে অধিকাংশ অর্থ ক্যাশ করছেন বা উঠিয়ে ফেলছেন। ১৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী
কারেন্সি এক্সপোজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। ১৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে
দিচ্ছেন। বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিবেশে বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ হেজ বা প্রতিকূল
পরিস্থিতিতে ঝুঁকি কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এদিকে প্রান্তিকওয়ারি হিসাবে মার্কিন
বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ অপরিবর্তিত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইউবিএসের
প্রতিবেদনে। তবে আনুপাতিক হিসাবে শেয়ারবাজার নিয়ে দেশটির বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ ৫৩
থেকে কমে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ইউবিএসের প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসা
মালিকদের তুলনামূলকভাবে বেশি সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে ৩১ শতাংশ
ব্যবসায় মালিক নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে চান,
যা গত প্রান্তিকে ছিল ৪৬ শতাংশ। নতুন করে অর্থ
বিনিয়োগের প্রবণতা কমলেও বিনিয়োগ থেকে অর্থ উঠিয়ে ফেলার প্রবণতা প্রান্তিকওয়ারি
হিসাবে ২২ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও বিনিয়োগকারী
ছাড়া বিদেশীদেরও মতামত নেয়া হয়েছে এ সমীক্ষায়। জরিপটিতে বিশ্বের ১৮টি বাজারের ৪
হাজার ৬০০ বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তার মতামত নেয়া হয়েছে, যেখানে
তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ নাগাদ ব্যবসায়িক আস্থা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ
দেখা গেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ
বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে ৬১ শতাংশ নিজেদের
অঞ্চলের অর্থনীতি ভালো করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। প্রান্তিকওয়ারি হিসাবে ওই উভয়
ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পরিবেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন মতামত গত প্রান্তিকের তুলনায় ২
শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। তবে নিজেদের দেশী শেয়ারবাজার ভালো করতে যাচ্ছে বলে মত
দিয়েছেন ৫৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী,
যা গত প্রান্তিকের চেয়ে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
এদিকে বাণিজ্য উত্তেজনায় বাজার
অস্থিতিশীল হওয়ায় নিজেরা শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন ৭৩ শতাংশ বৈশ্বিক অংশগ্রহণকারী।
বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশকে বিরাজমান প্রতিকূল বাণিজ্যিক পরিবেশের
প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিনিয়োগ থেকে অর্থ উঠিয়ে ফেলতে দেখা গেছে। সমীক্ষায় অংশ
নেয়াদের ৩৪ শতাংশ অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন। প্রান্তিকওয়ারি হিসাবে
গত প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে বিনিয়োগ থেকে অর্থ উঠিয়ে ফেলার প্রবণতা
উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ২৭ শতাংশীয় পয়েন্ট অর্থ উঠিয়ে
ফেলার কথা জানিয়েছেন।
বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি চলতি
পরিস্থিতিতে ব্যবসা মালিকদেরও সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে বা রক্ষণশীল আচরণ করতে দেখা
গেছে। ব্যবসা মালিকদের ৩৪ শতাংশ নতুন কর্মী নিয়োগের কথা ভাবছেন, যা
আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। অন্যদিকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে
বৈশ্বিক মন্দা শুরু হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। তবে
আগামী দুই প্রান্তিকের মধ্যে বৈশ্বিক মন্দা শুরুর শঙ্কা কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে
ইউবিএসের প্রতিবেদনে।
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের মতো
ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের বিষয়গুলো মাথাচাড়া দেয়ায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীদের মনোভাবে দোটানা ভাব বিরাজ করায় তারা দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন
বলে জানিয়েছেন ইউবিএসের গ্রাহক স্ট্র্যাটেজি কর্মকর্তা পাউলা পলিটু।