সমৃদ্ধির আশায় ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে দরিদ্র ভিয়েতনামিরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

পল্লী জীবন পেছনে ফেলে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিচ্ছে ভিয়েতনামের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু দরিদ্র তরুণ জনগোষ্ঠী। আর এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ পাচারের পথগুলো বেছে নিতে বিপুল অংকের ঋণও নিচ্ছে তারা।

ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের ঝুঁকি কত ভয়ংকর হতে পারে, তা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় ফুটে উঠেছে। চলতি সপ্তাহেই ব্রিটেনের সড়কে একটি রেফ্রিজারেটেড ট্রাকে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশী ৩১ জন পুরুষ ও আটজন নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ পুলিশ প্রাথমিকভাবে তাদের চীনা নাগরিক বলে জানালেও এখন তাদের মধ্যে কিছু ভিয়েতনামি নাগরিক থাকারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভিয়েতনামের অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই হাতেগোনা কয়েকটি মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশের বাসিন্দা। এ অঞ্চলগুলোয় মানব পাচারকারীরা হতাশ তরুণদের সামনে বিদেশে ভালো কাজের টোপ দেয়। আর গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবন ও সুযোগের অভাবে এ তরুণদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে প্ররোচিত করতে এটাই যথেষ্ট।

এই বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখা বহু তরুণই ভিয়েতনামের ক্রমবর্ধমান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আচ্ছন্ন প্রজন্মের, যাদের বয়স ত্রিশের নিচে। যারা প্রায়ই যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে বসবাসরত বন্ধু বা স্বজনদের অনুসরণ করে থাকে। এসব বন্ধু বা স্বজনের বিদেশ থেকে দেয়া ফেসবুক পোস্ট ও বাড়িতে পাঠানো অর্থের অংক, এ তরুণদের মনে ঝুঁকিপুর্ণ পথ বেছে নিয়ে হলেও ইউরোপে পাড়ি দেয়াটাই সার্থক এমন একটি ধারণা তৈরি করে দেয়।

দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে আসতে আগ্রহী এ অভিবাসীদের ভিয়েতনামের প্রত্যন্ত শহর ও পূর্ব ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ থাকা পাচারকারী নেটওয়ার্ককে ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে হয়। যার জন্য তাদের হয়তো আত্মীয়স্বজনদের থেকে ধার কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে হয়।

প্যারিসভিত্তিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ নাদিয়া সেবতাউই বলেন, পাচারকারীরা আসলে এ উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের কাছে যুক্তরাজ্যকেএল ডোরাডো বানিয়ে ফেলে।

পাচারকারীরা এমনকি তরুণদের মাসে প্রায় ৪ হাজার ডলার (৩ হাজার পাউন্ড) বেতনের চাকরিরও প্রতিশ্রুতি দেয়, যা ভিয়েতনামের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর বার্ষিক আয়ের প্রায় তিন গুণ।

কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে অনেক ভিন্ন। শেষ পর্যন্ত বহু অভিবাসন প্রত্যাশীর পাচারকারী ও ঋণদাতাদের কাছে হাজার হাজার ডলার বকেয়া থাকতে দেখা গেছে। বিশাল ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে অনেকেই যাত্রাপথে শোষণের মুখে পড়ে। সেবতাউই বলেন, এদের মধ্যে ইউরোপে কাজ করার প্রকৃত বাস্তবতা বোঝার মতো সচেতনতার অভাব রয়েছে। অবৈধ পথে পাড়ি দিয়ে আসা অনেককেই ম্যানিউরিস্টের মতো নিম্ন শ্রেণীর কাজ করতে হয়। কেউ কেউ গাঁজা চাষী হয়ে পড়ে, এমনকি যৌনকর্মীও হতে বাধ্য হয় অনেকে।

অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল ইসিপিএপি ইউকে ও প্যাসিফিক লিংক ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সিংহভাগ অবৈধ অভিবাসী মধ্য ভিয়েতনাম, নঘে আন, হা তিনহ ও কুয়াং বিনহরসহ অল্প কিছু প্রদেশ থেকে আসে। গত দশকে ভিয়েতনামের দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়টিতে এ অঞ্চলটি মূলত উপেক্ষিত রয়ে গেছে। এখানকার বেশির ভাগ তরুণের জন্য কেবল কারখানা, নির্মাণ বা কৃষিক্ষেতে কাজ করার সুযোগই রয়েছে।

কিন্তু এ অঞ্চলটিতে খুব সহজে ইউরোপে পাড়ি জমাতে সহায়তাকারী খুঁজে বের করা সম্ভব, তবে অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। ইউরোপের ক্ষেত্রে রাশিয়া তুলনামূলক সহজ গন্তব্যস্থল। পর্যটন ভিসা বা নকল পাসপোর্টেই অধিকাংশ সময় কাজ হয়ে যায়। পরে পুরো পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে থাকা অপরাধী চক্র অভিবাসন প্রত্যাশীদের অন্যান্য দেশে যেতে সাহায্য করে এবং অবশ্যই অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে।

            সূত্র: এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন