অ্যানিমের রেনেসাঁর চলছে এখন

এবারের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জাপানের অ্যানিমে ছবির জন্য বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে...

টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে জাপানি অ্যানিমে মুভির জন্য একটি অংশ বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়েছে।

মুহূর্তে জাপানি অ্যানিমে ছবি ঘিরে সারা দুনিয়ায় এক ধরনের উন্মাদনা চলছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তার প্রতিফলন শুধু জাপানের অভ্যন্তরীণ বাজারেই নয়, বৈশ্বিক বাজারেও বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে অ্যানিমে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ এবারের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও একটি বিভাগ খোলা হয়েছে মাধ্যমটির জন্য।

উৎসবে মূল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বছর স্থানীয় অ্যানিমেশন ভিজ্যুয়াল এফেক্টের (লাইভ অ্যাকশন ছবি) অগ্রগতি, পরিবেশনা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী, আলোচনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য জাপানি অ্যানিমে মুভির আদ্যোপান্ত তুলে ধরা, সঙ্গে প্রদর্শিত হবে তিনটি ধ্রুপদি ছবি, আর ১৯৬৬ সালের টিভি সিরিজ আল্ট্রা কিউ।

অ্যানিমে ছবির শক্তিমত্তা বোঝাতেই বছর পাঁচটি ছবি মুক্তি পাবে। তার মধ্যে আছে আয়ুমু ওয়াতানাবের চিলেড্রেন অব দ্য সি, হিরোউকি ইমায়াইশির প্রোমারে, মাসাকি ইয়োসার রাইড ইউর ওয়েভ এবং মাকোতো শিনকাইয়ের ওয়েদারিং উইথ ইউ। শিনকাইয়ের ২০১৬ সালের মেগাহিট ইউর নেম জাপানে বক্স অফিস থেকে আয় করেছে ১১৮ মিলিয়ন ডলার। গত বছরের কিতারো কোসাকার ওকো ইনও ঈর্ষণীয় ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে।

টোকিও উৎসবের অ্যানিমেশন ফোকাস প্রোগ্রামের উপদেষ্টা অ্যানিমের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে ইউর নেম ছবির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।এর আগে যেসব ছবি জাপানি মুদ্রায় ১০ বিলিয়ন (৯২ মিলিয়ন ডলার) বক্স অফিস থেকে আয় করতে পেরেছে, তা ছিল স্টুডিও জিবারির’— বলেন হিকাওয়া। স্টুডিও জিবারির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি স্মরণ করেন জাপানের কিংবদন্তি অ্যানিমেশন গুরু হায়ায়ো মিয়াজাকির নাম, তিনি স্টুডিও জিবারির সহপ্রতিষ্ঠাতা।কিন্তু ইউর নেম খাঁটি জাপানি ছবি, যাতে শিনকাই তার নিজস্ব সংবেদনশীলতা ফুটিয়ে তুলেছেন এবং দর্শক টানতে সফল হয়েছেন।

প্রোমারে ছবির চিত্রনাট্যকার কাজুকি নাকাশিমা জাপানি অ্যানিমের সাফল্যের পেছনে ২০১৩ সালে মিয়াজাকির অবসর নেয়াকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মনে করছেন: ‘মিয়াজাকি যখন অবসর নিলেন, তখন সবাই তার ওই শূন্যস্থানটি পাওয়ার লড়াইয়ে নেমে গেল।

মিয়াজাকিও অবসর ভেঙে ফিরে এসে বুঝেছেন নতুন একটি ছবির কাজ করছেন তিনি, উৎসবে পাঁচটি নতুন ছবির প্রদর্শনীই প্রমাণ করেছে শহরে বর্ষীয়ান পরিচালক এখন আর একমাত্র ব্যক্তি না, অন্যরাও এসে গেছে।

নতুন ছবি যেমন দর্শকদের অ্যানিমের মহত্ত্ব শক্তিমত্তার সঙ্গে পরিচয় ঘটাবে, অন্যদিকে তিনটি ক্ল্যাসিক ছবি থেকেও পাওয়া যাবে অ্যানিমের আনন্দদায়ক ইতিহাস। ক্ল্যাসিক ছবির প্রথম প্রদর্শনী হবে দ্য হোয়াইট স্নেক এনচ্যানট্রেস (১৯৫৮) দিয়ে। এটাই জাপানের প্রথম রঙিন পূর্ণদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন ছবি। তো অ্যানিমেশন সম্প্রতি ছবির ডিজিটালি পুনরুদ্ধারের কাজ করেছে, বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ক্ল্যাসিক বিভাগে ছবিটির অভিষেকও ঘটে। ইতিহাস বর্ণনার পরের ছবি পরিচালক ওসামু দেজাকি, তার ছবি আই এম ফর দ্য বেস্ট। হিয়াকাইয়া জানান: ‘দ্য হোয়াইট স্নেক এনচ্যানট্রেস নির্মিত ডিজনির অনুকরণে, আই এম ফর দ্য বেস্ট পুরোই জাপানি অ্যানিমেশন। অল্প খরচের নানা কায়দার প্রয়োগ হয়েছে ছবিতে। জাপানের সত্যিকারের অ্যানিমেশনের নির্যাসে পরিপূর্ণ ছবি এটি। বিদেশ থেকে আসা দর্শকরা ছবি দেখে নিশ্চিত চমকে উঠবে’—বলেন হিয়াকাইয়া। সর্বশেষ প্রদর্শনী হবে দেশের বাইরে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া আকিরা ছবি দিয়ে। কাতসুহিরো অতোমো ১৯৮৮ সালে ছবিটি বানান। ছবি যখন বানানো হয়, তখন ইন্টারনেট আসেনি। কিন্তু ছবিতে মানুষ আর যন্ত্রের সীমাহীন মিশ্রণ দেখানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন