অজান্তেই কোম্পানির পরিচালক, পড়েছেন ৬ কোটি টাকার ঋণের ফাঁদেও!

প্রতারকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

ভুয়া কোম্পানি খুলে সেই কোম্পানিতে একই পরিবারের কয়েকজনকে বিভিন্ন পদে দেখিয়ে ব্যাংক ছয় কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন জোবাইদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। অথচ ভুক্তভোগী ওই পরিবারের সদস্যরা যে ওই কোম্পানির পরিচালক তা জানতে পারেন ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের মামলার সমন আসার পর। তাদের করা মামলায় প্রতারক জোবাইদুরের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম প্রতারণা মামলায় সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রাজধানীর কলাবাগানে  ‘স্বপ্নীল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি খোলা হয়। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি রেজিস্টার অব কয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়। সেখানে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার পশ্চিম ভেকুম গ্রামের জোবাইদুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রাজধানীর মিরপুর থানাধীন ৯২৮ মধ্যমনিপুরের বাসিন্দা এস. এ মাহমুদীকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখানো হয়। পরবর্তীতে তারা কোম্পানির নামে ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি হিসাব খুলেন।

ওই ব্যাংক হিসাবে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রীস্থ এম-ব্লকের, ৭/এ নম্বর রোডের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান (৭২), তার স্ত্রী মমতাজ বেগম এবং ভাই মো. রফিক উল্লাহ ও জনৈক সেলিম মিয়াকে পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়। 

এরপর ছয় কোটি টাকা ঋণের আবেদন করলে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর তা মঞ্জুর হয়। যার জামানত হিসেবে ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার চেক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক জামানত হিসেবে রাখা ৫ কোটি টাকার চেক ব্যাংকে জমা দিয়ে ডিজঅনার করিয়ে আদালতে এসআই এ্যাক্টে একটি মামলা দায়ের করে। যেখানে জোবাইদুর ও মাহমুদী ছাড়াও আবু সুফিয়ান ও জনৈক সেলিম মিয়াকে আসামি করা হয়। 


মামলার সমন পেয়ে আবু সুফিয়ান আদালতে এসে জানতে পারেন স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সেসহ তার স্ত্রী ও ভাইকে স্বপ্নীল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দেখানোয় মামলায় তারা আসামি হয়েছেন।

পরবর্তীতে এ জাল-জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখপূর্বক আবু সুফিয়ান ঢাকা সিএমএম আদালতে চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। যার তদন্ত শেষে গত ২১ অক্টোবর সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম সিদ্দিক ভুয়া কাগজপত্র ও জাল-জালিয়াতির মধ্যেমে আবু সুফিয়ান ও তার স্ত্রী ও ভাইকে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দেখানোর অভিযোগে জোবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্বপ্নীল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’ এর ঠিকানা রাজধানীর কলাবাগান ৬১/৯, পান্থপথ, স্যুট নং-১৩/সি (১৪ তলা) দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় নাই। জোবাইদুর রহমানই সকল কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করে দাখিল করেন। এ কোম্পানির সঙ্গে জোবাইদুর ছাড়া কারোই সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মূলত ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্যই ভুয়া কাগজপত্রের মধ্যেমে সে উক্ত কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করায় এবং ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন আহমদের সহযোগিতায় হিসাব খোলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র কোন প্রকার যাচাই বাছাই না করে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ব্যতিরেকে ছয় কোটি টাকার ঋণের আবেদন মঞ্জুর করেন।

ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার ক্লায়েন্ট আবু সুফিয়ান প্রতারক জোবাইদুর রহমানকে কখনো দেখেননি এবং চেনেও না। ব্যাংক মামলা করার পরই তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। হয়তো তার কোন নিকট আত্মীয় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তা না হলে তার ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে জোবাইদুর রহমান জানতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন