পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন এবং খাতটির বর্তমান অবস্থা বোঝার জন্য সঠিক পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত পর্যায়ে রয়েছে, এ সময়ে নির্ভুল ও যথাযথ তথ্যের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কৃষির সার্বিক অবস্থা বুঝতে প্রতি ১০ বছর পর কৃষিশুমারি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সম্প্রতি কৃষিশুমারি ২০১৯-এর ফল ঘোষণা করেছে বিবিএস। শুরুতেই কৃষিশুমারির তথ্য ও গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিপূর্ণ কৃষিশুমারি হয়ে ওঠেনি এটি। তথ্য নিয়ে বিবিএসের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রায় সময় বিরোধ সৃষ্টি হয়। এটি সমাধানে উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয় না। অনেক জায়গায় ছাদবাগানে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হয়। দিন দিন এ হার বাড়ছে। কৃষিশুমারিতে ছাদবাগানের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের কোনো তথ্য নেই। সারা দেশে অনেক জেলায় ভাসমান মাচার ওপর কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হয়। কৃষিশুমারিতে সেই তথ্যও নেই। ড্রাগন ফলও প্রচুর উৎপাদন হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু কতটুকু জমিতে কী পরিমাণ ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়, সেই তথ্যও আসেনি কৃষিশুমারিতে। অনেক উঠতি ফসল আছে, যেগুলো কৃষিশুমারিতে বাদ পড়ে গেছে। দেশে ডিমের উৎপাদন কত, তা কৃষিশুমারির প্রশ্নপত্রে যোগ করা হয়নি। দুধের উৎপাদন, মাছের উৎপাদন, মাংসের উৎপাদন কত—এসব বিষয় যুক্ত হয়নি। মিষ্টি পানিতে কেমন মাছ উৎপাদন হয় আবার লবণাক্ত পানিতে কী পরিমাণ, তার কোনো তথ্যই নেই কৃষিশুমারিতে। দেশের রফতানি আয়ের একটি অংশ আসে চিংড়ি থেকে। কিন্তু দেশে এখন চিংড়ি উৎপাদন কত, তা কৃষিশুমারিতে আসেনি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষির বিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি কৃষিশুমারি। ফলে আংশিক তথ্য উঠে এসেছে জরিপে। এতে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাজেট বরাদ্দে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আলোচ্য জরিপটি পরিচালনা করা হলে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ত বৈকি। আশা করি, আগামীতে কৃষিভিত্তিক যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও জরিপ পরিচালনায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিবিএস নিবিড়ভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে একটি। উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে অদূরভবিষ্যতে আবাস, অবকাঠামো ও কলকারখানা নির্মাণে আবাদি জমি যে ক্রমবর্ধমান হারে বেদখল হবে তা বলা বাহুল্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভূমি হ্রাস, বর্ধিত লবণাক্ততা ও অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। এসব বিবেচনায় তখন খাদ্যনিরাপত্তার জন্য আবাদি জমি ও পানি অপর্যাপ্ত প্রতীয়মান হতে পারে। আবার মানুষের আয় ও জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে দানাদার খাদ্যশস্যের চাহিদা কমে যেতে পারে এবং পানির চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। সমাজ ও অর্থনীতির এ রূপান্তরের পথে মানুষের অভিযোজনের প্রক্রিয়া মসৃণ করতে দরকার সঠিক প্রাক্কলন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন।
মানবসভ্যতা বিকাশের প্রতিটি স্তরে রয়েছে কৃষির অনবদ্য ভূমিকা। মানুষ নিজ বুদ্ধিবলে জড় শক্তিকে কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করে কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন অনেক বাড়িয়েছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারে মানুষের চাহিদার প্রসার গ্রামীণ সভ্যতার শান্ত জীবনকে চঞ্চল করে তুলল। এভাবে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটতে শুরু হলো। একদিকে বিজ্ঞান ও শিল্পের উন্নতি, অন্যদিকে নতুন নতুন জ্ঞানের আবেশে জীবিকা সত্তাভিত্তিক চাষ বাণিজ্যিক বাজারভিত্তিক চাষে রূপান্তর হলো। আজ শুধু খাদ্যের প্রয়োজন নয়, বাণিজ্যেরও প্রয়োজন। বিনিময় অর্থনীতিতে উন্নত দেশগুলো আজ কৃষিকে নতুন কলেবর দান করেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, কৃষিকাজ আজ কোনো শস্য চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজ দ্রব্য উৎপাদনকল্পে মত্স্য চাষ, পশু পালন, বনভূমি সংরক্ষণ প্রভৃতি বর্তমানে ব্যাপকভাবে কৃষিকাজের আওতায় আনা
- স্মার্ট বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন পথে?
- বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক না করে বাজারদর স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়
- চীন-মার্কিন সম্পর্কের মানবিকীকরণ
- ডেঙ্গু ছড়াবে সারা দেশে: সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি
- পুরনো ও পরিত্যক্ত কূপ সংস্কারের পাশাপাশি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারে সচেষ্ট হতে হবে