‘এখন মৌলিক গান তৈরি হচ্ছে না’

ফাহমিদা তাপসী

ফোনে যখন পাওয়া গেল তখন তিনি টেলিভিশনের জন্য করা কোনো একটি গানের অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে। ফোন ধরেই সময় চাইলেন কিছুটা। নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফোন করলেন সঠিক সময়েই। বলছিলাম সংগীতশিল্পী ফাহিমদা নবীর কথা। গান যার ধ্যানে-জ্ঞানে, এমন একজনের সঙ্গে গল্পের শুরুটা গান নিয়েই তো হতে হয়। গান নিয়ে গল্পের ফাঁকে কথা হয়েছে আনুষঙ্গিক আরো বিষয় নিয়ে। তার সঙ্গে আলাপনের খানিকটা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো

ব্যস্ততার খবর দিয়েই শুরু...

নিজের কিছু গানের কাজ সারলাম। মা নিয়ে একটা গানের কাজ শেষ করেছি। গানের সুর আমারই ছিল। গানটি ইউটিউবে অবমুক্ত করা হয়েছে। এখন তো আসলে সেভাবে অ্যালবাম করে আর ছাড়া হয় না, বরং একটা একটা করে গান ইউটিউবে ছাড়া হয়। সেই সঙ্গে আরো একটা গানের কথা না বললেই নয়। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম দিনে সে গানটি শ্রোতাদের জন্য ছাড়া হবে। এটির পেছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে। আনিসুজ্জামান জুয়েল নামে একটা ছেলে ফেসবুকে একটা ছবি শেয়ার করে কিছু লাইন তুলে দিয়েছিল সেখানে। শহরের জনজীবন নিয়ে লেখা কথাগুলো আমার এতটাই ভালো লেগেছিল যে এটা আমি গাইতে আগ্রহ বোধ করেছিলাম। বর্ণ চক্রবর্তীর সুরে সে গানটিই শ্রোতারা শুনতে পাবেন ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে। গানের একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কিছু আধুনিক গানের কাজও করছি পাশাপাশি।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশী সংগীতের অবস্থা কেমন বলে মনে করেন?

বিগত দু-তিন বছরে আমরা অনেক শিল্পী হারিয়েছি। তাদের অকালে চলে যাওয়া মেনে নেয়া আমাদের জন্য কঠিন। তারা মনে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের কাজ দিয়ে। শিল্পীদের আসলে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। শুধু গান জানলেই সংগীতশিল্পী হওয়া যায়, এমনটা ভাবাও বোকামি। একজন প্রকৃত শিল্পী হতে হলে কাজের প্রতি সততা, নিষ্ঠা থাকা চাই। আমার আব্বা আমাদের সবসময় বলতেন, একজন ভালো গান গায়, তাই বলে সে একজন ভালো শিল্পী কিংবা সে মানুষের মনে জায়গা করে নেবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। একজন শিল্পী তখনই মানুষের মনে স্থান পায়, যখন সে একজন ভালো মানুষ হতে পারে, বিনয়ী হতে পারে। কেননা তাকে দেখেই তো অনেক মানুষ শেখে। যাকে দেখে অনেক মানুষ শেখে, তাকে কিন্তু ভালো হতে হয়, নিরহংকারী হতে হয়, অনেক পড়াশোনা করতে হয়, অর্থাৎ জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হয়। এত কিছু বলার পেছনের কারণ হচ্ছে, বর্তমান সময়ে স্টেজ পারফর্মিং শোকেন্দ্রিক কিছু শিল্পী তৈরি হচ্ছে বা তাদের মধ্যে এমন একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা কোনোভাবেই সংগীতজগতের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনবে না। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশী সংগীত অঙ্গণের অবস্থা কিন্তু খুব ভালো না।

শিল্পীরা স্টেজ শোতে বেশি আগ্রহী হলে সমস্যা কোথায়?

একটা সময় আমরা দেখতাম প্রচুর মৌলিক গান তৈরি হতো। এখন সেটা কিন্তু নেই বললেই চলে। নতুন শিল্পীরা অধিকাংশই ঝুঁকছেন বিভিন্ন স্টেজ শোর প্রতি। ফলে এখন মৌলিক গান তৈরি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিল্পীই আর তৈরি হচ্ছে না। এতে একটা সময় দেখা যাবে, নিজেদের আর কোনো গানই নেই। সময়টা ভীষণ প্রতিযোগিতামূলক। শ্রোতাদের হাতের মুঠোয় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্পীর গান। তাই শিল্পীদেরও কিন্তু নিজস্বতা ধরে রাখতে হবে। কোনো একটা গান শুনলেই যাতে বলে দেয়া যায় এটা অমুকের গান। ধরনের নিজস্বতা তৈরি করা খুব প্রয়োজন। আগের দিনের শিল্পীরা সবার মনে জায়গা ধরে রাখতে পেরেছিলেন কিন্তু নিজেদের নিজস্বতা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন