বৈশ্বিক আর্থিক খাতে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা লিবরা প্রণয়নে কাজ করছে টেক জায়ান্ট ফেসবুক। একই রকম ডিজিটাল মুদ্রা প্রণয়নে চীনেরও অনেক দিনের স্বপ্ন রয়েছে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল বেইজিং। সম্প্রতি দেশটির আইনসভায় নতুন একটি আইন পাস হয়েছে। ফলে দেশটি নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা প্রণয়নের পথে নানামুখী বাধা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রণয়নের স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে গবেষণা শুরু করে চীন সরকার। এ প্রকল্পে দেশটির আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা, সাইবার সিকিউরিটি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল নিজস্ব একটি ডিজিটাল মুদ্রা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে কাগুজে নোটের সরবরাহে ব্যয় কমিয়ে আনা এবং ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে লেনদেন বর্তমানের তুলনায় সহজ ও নিরাপদ করা। এর মধ্য দিয়ে অর্থের সাপ্লাই চেইনে আইনপ্রণেতাদের নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়ানো যাবে বলেও মনে করা হচ্ছিল।
চীনের প্রস্তাবিত এ ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে ফেসবুকের চালু হতে যাওয়া ডিজিটাল মুদ্রা লিবরার অনেক মিল রয়েছে। ২০২০ সালে লিবরা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। লিবরার মতো চীনা এ ডিজিটাল মুদ্রাও উইচ্যাট এবং আলিপে’র মতো জনপ্রিয় লেনদেন সাইটগুলোয় ব্যবহার করা যাবে বলে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া চীনের এ নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি আইন ‘ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবসার উন্নয়ন এবং সাইবার জগতে তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ আইন পাসের মধ্য দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার দ্বার উন্মুক্ত হলো।
ফেসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা লিবরা লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্লকচেইন রেকর্ড মেনে চলা হবে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত সপ্তাহে চীনের নিজস্ব ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রণয়নে বেইজিংয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তোড়জোড়ের আভাস মিলেছে।
যদিও ফেসবুকের লিবরা নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। মার্কিন আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ লিবরা দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বলা হচ্ছে, এতে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ও লেনদেনের তথ্য বেহাত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফ্রান্স-জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশও লিবরার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সমালোচনার মুখে ভিসা, পেপলের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি অনলাইন লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান লিবরা ত্যাগ করেছে।