ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে আ.লীগ

তানিম আহমেদ

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন এ সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার ভাষ্য, বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। তখন নাগরিক সুবিধাসংক্রান্ত অনেক বিষয় ইস্যু হিসেবে উঠে আসবে। বিশেষ করে এবার ডেঙ্গু মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনের যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, তাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে প্রচার করতে পারে বিরোধী পক্ষ। এছাড়া বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির ফলে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেই সঙ্গে নগরীতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলায় যানজটের ভোগান্তিও ছিল অসহনীয়। এসব বিষয় ভোটের মাঠে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নামবে। ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক শক্তি আছে তাদের।

এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোট জমজমাট হবে, সেই সঙ্গে কঠিনও হবে। এ কারণে ঢাকার দুই সিটিতে যোগ্যদের প্রার্থী করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, দায়িত্ব পালনকালে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের মনোনয়ন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তার পরিবর্তে ভাবা হচ্ছে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস বা ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে। এছাড়াও আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পুরান ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান ফয়সাল আহসানউল্লাহ।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা। কারণ নিজের যোগ্যতা প্রমাণে খুব বেশি সময় পাননি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সে বিবেচনায় তাকে আরেকবার সুযোগ দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নাম আসে। তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ছাড়াও চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগও ওঠে। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলরকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব। এসব কারণে কাউন্সিলরদের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আর তাই কপাল পুড়তে পারে বেশির ভাগ কাউন্সিলরের।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় প্রথমবারের মতো। এরপর ওই বছরের ৬ মে শপথ গ্রহণ করেন দুই মেয়র। সে অনুযায়ী আগামী বছরের মে মাসে মেয়াদ শেষ হবে মেয়রদের। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে ভোট করতে হবে। সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির দিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগেই নতুন নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে আমাদের এ সিটিগুলোর নির্বাচন করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে সময় হলেই আমরা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আগামী বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঘোষিতমুজিববর্ষ উদযাপনের সুবিধার্থে আগেভাগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি। জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ থেকে শুরু করে পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে। প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের পরিকল্পনা থাকলেও ডিসেম্বরের ২০ ও ২১ তারিখ ২১তম সম্মেলন হওয়ায় সেই বিষয়ে সবুজ সংকেত নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগে ডিসেম্বরে সিটি নির্বাচনের কথা বললেও এখন তিনি জানুয়ারিতে সিটি নির্বাচন হবে বলে দলের বিভিন্ন সভায় বলছেন।

সিটি নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কারণ বাংলাদেশের মানুষ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। তার পরও ঢাকা সিটি নির্বাচন তো আরো বেশি চ্যালেঞ্জের, কারণ এখনকার ভোটারদের অধিকাংশ হলেন শিক্ষিত, তারা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই ভোট দেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন