সিরিয়ায় মার্কিন অভিযানে নিহত হয়েছেন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। গতকাল হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযানকালে বাগদাদি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প। খবর সিএনএন ও এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলে, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় আইএস নেতার খোঁজে
অভিযান চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অভিযানের অনুমতি
দিয়েছেন। তবে কোনো সূত্রই বাগদাদি নিহতের খবর নিশ্চিত করছিল না।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আগে
রহস্যপূর্ণ একটি টুইট শেয়ার করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ‘খুব
একটা কিছু এইমাত্র ঘটেছে।’
পরে হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে
ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগদাদি নিহতের খবর নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত
রাতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী নেতাকে বিচারের আওতায় এনেছে। আবু
বকর আল-বাগদাদি এখন মৃত।
ট্রাম্প আরো বলেন, তিনি ছিলেন আইসিসের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা। বিশ্বের নৃশংসতম ও সহিংস সন্ত্রাসী সংগঠন এটি। যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে বাগদাদিকে খুঁজছিল। জাতীয় নিরাপত্তায় আমাদের প্রশাসনের অগ্রাধিকার ছিল তাকে জীবিত অথবা মৃত ধরা।
আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির খোঁজে
এ মার্কিন অভিযানকে ‘নিখুঁত অভিযান’ অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, মার্কিন স্পেশাল অপারেশন ফোর্স একটি
বিপজ্জনক ও সাহসী রাত্রিকালীন অভিযান সম্পন্ন করেছে। উড়ে গিয়ে মিশন সম্পন্ন করে
আবার অক্ষত ফিরে আসা খুব কঠিন ছিল। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এ অভিযান পরিচালনা করা
হয়। মিশনকে তারা সফল করেছেন দারুণভাবে। আমি অভিযানের অনেকখানি দেখেছি। কোনো সেনাকে
হারাতে হয়নি। তবে সেখানে বাগদাদির সঙ্গে থাকা বিপুলসংখ্যক যোদ্ধা ও সহচর নিহত
হয়েছে।
বাগদাদি তার গায়ে থাকা বিস্ফোরকের
বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়েছেন। এ বিস্ফোরণে তিন শিশু ও বাগদাদির দুই স্ত্রী প্রাণ
হারিয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প।
ট্রাম্প আরো জানান, দৌড়ে
পালাতে গিয়ে একটি কানা সুড়ঙ্গে আটকে যান বাগদাদি। আমাদের ডগ স্কোয়াড তার পিছু
ধাওয়া করায় তিনি সুড়ঙ্গের শেষ মাথা পর্যন্ত দৌড়েছিলেন। সেই কম্পাউন্ডটিতে অভিযান
চালায় সেনারা। যারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে তারা প্রাণ হারিয়েছে, অনেকে
আত্মসমর্পণ করেছে। সেই বাড়িটি থেকে ১১টি শিশুকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ
সেখানে অবশিষ্ট কয়েকজনের মধ্যে বাগদাদিও থাকেন। পাশেই থাকা তিনটি শিশুকে তিনি কাছে
টেনে নেন। গায়ে পরিহিত বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটান এবং তিনটি শিশুসহ আত্মহত্যা করেন।
বিস্ফোরণে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
এটি পূর্বপরিকল্পিত একটি অভিযান ছিল
বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান,
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাগদাদির গতিবিধি
পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। শনিবার রাতে সফল অভিযানের আগে দু-তিনটি মিশন
বাতিল করা হয়েছে। অভিযানকালে রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক গ্রুপ
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে হেলিকপ্টারের
গুলিতে একটি গ্রামের নয়জন বাসিন্দা নিহত হয়েছে। এ গ্রামে আইএস গ্রুপের উপস্থিতি
রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু
বকর আল-বাগদাদির আসল পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটি তার আসল নাম নয় বলে মনে করা
হয়। তার আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল-বদরি। ধারণা করা হয়,
১৯৭১ সালে ইরাকের সামারার কাছে একটি সুন্নি
পরিবারে তার জন্ম। তিনি ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক, কোরানিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ও
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানা যায়।
২০০৪ সালে ইঙ্গ-মার্কিন
আক্রমণের শিকার হয়ে ক্যাম্প বুকাতে বন্দি হন বাগদাদি। সেখানে সাবেক ইরাকি গোয়েন্দা
কর্মকর্তা ও অন্য বন্দিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। ২০০৩ সালে
মার্কিন নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণের সময় আল-বাগদাদি বাগদাদের একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
চার বছর পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আল-বাগদাদি ইরাকে
আল কায়েদার নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ইরাকের আল কায়েদা নিজেদের ২০১০ সালে ‘ইসলামিক
স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট’ বা আইএসআইএল বলে ঘোষণা করে।
২০১১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র আল-বাগদাদিকে
সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা
করা হয়।