শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম

জোর প্রস্তুতি বাগেরহাটের জেলেদের, রাজস্ব লক্ষ্য ৩ কোটি টাকা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বাগেরহাট

আগামী ১ নভেম্বর শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম। এবার মৌসুমটিতে বন বিভাগ থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। মৌসুমের ছয় মাস শুঁটকি তৈরির জন্য মাছ আহরণে সাগরে অবস্থান করবেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলেরা। বর্তমানে চলছে সমুদ্রগামী জেলেদের জোর প্রস্তুতি। অন্য অঞ্চলের মতো বাগেরহাটের জেলেরাও মেরামত করে নিচ্ছেন ট্রলার, নৌকা ও জাল।

সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, শুঁটকির জন্য মাছ আহরণের এ সময়ে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা আলোর কোল, মাঝের চর, দুবলার চর, মাঝের কেল্লা, নারকেলবাড়িয়া, শেলার চরসহ আটটি চরে প্রায় ২০ হাজার জেলে অবস্থান করবেন। বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ আহরণের পর শুঁটকি তৈরি করবেন এসব চরেই। বন বিভাগ থেকে এ সময় জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হবে। তারা যাতে বেশি পরিমাণে মাছ ধরতে পারেন, সেজন্য নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

বাগেরহাটে শুঁটকি মৌসুমে মাছ আহরণে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেলে রয়েছে রামপাল উপজেলায়। এ উপজেলার সদর, পেড়িখালী, বাঁশতলী, বাইনতলা ও উজলকুড় ইউনিয়নে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন পাঁচশতাধিক। বর্তমানে তারা সবাই সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নানা সংকটে পড়ছেন তাদের অধিকাংশই। বিশেষ করে ছয় মাসের রসদ জোগাড় করতে গিয়ে নিতে হচ্ছে ঋণ। সঙ্গে রয়েছে বাড়িতে রেখে যাওয়া পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তাও।

জেলেরা বলছেন, ছয় মাস সাগরে থাকার রসদ জোগাড় করতে গিয়ে তারা ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। চড়া সুদে কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পাশপাশি ঋণ নিতে হচ্ছে বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক ও সমিতি থেকেও। মৌসুম শেষে তারা সবাই এ টাকা ফেরত দিতে পারবেন কিনা জানেন না। এছাড়া রয়েছে দস্যুদের হামলা, অপহরণ ও মুক্তিপণের শঙ্কা।

পেড়িখালীর ওমর ফারুক, সোহেল মল্লিক ও আজাদ শেখসহ বেশ কয়েকজন জেলে জানান, প্রতি বছরই এ সময়ে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তারা বিপাকে পড়েন। মহাজনদের কাছ থেকে ৩০-৪০ শতাংশ সুদে টাকা ধার নিয়ে কেউ কেউ নতুন ট্রলার ও জালসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করেন। এছাড়া ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মেরামত করা হয় ট্রলার ও জাল। এর পরও তাদের দুশ্চিন্তা থেকে যায় অসাধু বনরক্ষী ও দস্যুদের দৌরাত্ম্য নিয়ে। তবে বন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ আহরণ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

সমুদ্রগামী জেলে সমিতির সভাপতি মল্লিক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই জেলেরা নানা সংকট মাথায় নিয়েই শুঁটকি মৌসুমে সমুদ্রে যান। দস্যুদের উৎপাত, মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজি, প্রতিকূল ও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই তারা এ পেশা ধরে রেখেছেন। শুঁটকি থেকে সরকারও বড় অংকের রাজস্ব পায়। তবে পরিতাপের বিষয়, বিভিন্ন চরে মহাজনদের কাছে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে জেলেরা ন্যায্য দাম পান না।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন চরগুলোয় ১ নভেম্বর শুঁটকি আহরণ মৌসুম শুরু হচ্ছে। ওইদিন থেকেই জেলেরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মাছ ধরার জন্য যাত্রা করতে পারবেন। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বনরক্ষীরা সবসময়ই তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। গত বছর এ মৌসুমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন