তরুণ জনগোষ্ঠীর কার্যকর ব্যবহার ও এসডিজির লক্ষ্য অর্জন

মোহাম্মদ জমির

বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে মূলত তরুণদের একটা অংশের বিপ্লবের ফলে। একই সঙ্গে আরেকটি বিষয় সামনে উঠে এসেছে, আর সেটা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণদের নৈতিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি। ফলে সমাজের সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য সামাজিক স্তরের সঙ্গে তরুণদের চৈন্তিক স্খলন ঘটেছে, যা কিনা তারুণ্যের বিভাজন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট সব সমাজ-অর্থনীতিবিদ এর গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন।

নিউইয়র্কে ইউএনজিএ সেশনে ইউনিসেফ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারচ্যাম্পিয়নস ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ং পিপল প্রদানের পর বিষয়টি স্পষ্টভাবে আমাদের সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তাঁর মূল দর্শনশিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড এবং কোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না শিক্ষা ছাড়া তরুণদের নানা ইস্যু সমাধানে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। উপরন্তু লাখ লাখ তরুণ তাদের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি সবাই একমত পোষণ করেছেন। এটি তার বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রমাণ হয়েছে, যখন তিনি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের স্থিতিশীল উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি, একটি দায়িত্বশীল ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং অর্থনীতি গড়ে তুলতে এ বিষয়টিকে সবসময় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

আমরা সবাই চাই, আমাদের সন্তানরা যেন সেসব মূল্যবোধ অনুসরণ করে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, যেখানে সম্মিলিত দায়িত্ব গুণাবলিকে উৎসাহিত করবে এবং খারাপ কাজগুলোকে দূরে সরিয়ে দেবে। এ প্রসঙ্গে আমরা আরো পর্যবেক্ষণ করেছি যে, প্রবীণরা যদি তরুণ প্রজন্মের জন্য রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরিষেবা দেয়, তাহলে সেখানে মর্যাদা ও মানবাধিকারসম্পন্ন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এখন সাধারণভাবে সবাই একমত, তরুণরা বেশির ভাগ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের মতো মানবাধিকারগুলো উপভোগ করার মতো বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বলে পরিলক্ষিত হয়। তবে এ মতামতটিও প্রচলিত আছে যে, অর্থবোধক ও কার্যকরী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের এ মানবাধিকার চর্চায় অস্বীকৃতি বা অক্ষমতা প্রকাশ করলে, বিশেষত চিন্তার স্বাধীনতা, মতামত, সমাবেশ ও সংঘবদ্ধতা পুরো সমাজের ওপর তা অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং নিরাপত্তা থেকে শুরু করে শান্তি লঙ্ঘনের মতো ব্যাপার ঘটতে পারে। ফলে এ জাতীয় গতিশীলতা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারশিক্ষা, কাজ ও স্বাস্থ্যের অধিকার পূরণ ও সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যুব কর্মসূচি এবং নীতি বিকাশের মাধ্যমে এ-জাতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তরুণদের বুঝতে হলে তাদের শৈশবকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার যে সময়কাল, সেখানে সমাজের একজন সদস্য হিসেবে স্বাধীনতা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সম্পর্কে তাদের যে সচেতনতা গড়ে ওঠে, তার মাধ্যমে রূপান্তর সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন যুবকদের জন্য বয়সসীমা ১৫ থেকে ২৪ বছর নির্ধারণ করেছে, যা যেকোনো অঞ্চলে পরিসংখ্যানগত ধারাবাহিকতার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যেকোনো সংজ্ঞার ক্ষেত্রে পূর্বসংস্কার ছাড়াই প্রয়োগ করা হয়। যুবা, শান্তি ও সুরক্ষা বিষয়ে জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের রেজল্যুশন ২২৫০ অনুযায়ী এ বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৯ বছর ধরা হয়। আফ্রিকান যুবসনদ অনুযায়ী, এ বয়সসীমা ১৫ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বাস্তবিক অর্থে তরুণদের কখনই একটি নির্দিষ্ট বয়স-গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনার পরিবর্তে একটি সামষ্টিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক চিন্তাধারা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে বুঝতে হবে। এ-জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বিভিন্ন অধিকারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করে; বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থা, শ্রমবাজার, শিক্ষা ও পরিবারের মধ্যে। জাতীয় পর্যায়ে নমনীয়তার কারণে যখন জাতিসংঘ জাতীয় পর্যায়ে যুবনীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের কথা বলে, তখন কোনো সদস্য রাষ্ট্র ব্যবহারযোগ্য যুবকদের বয়সসীমা এবং সংজ্ঞাটিকে আরো নমনীয় পদ্ধতিতে মেনে চলে।

এটি আমাদের বুঝতে হবে শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের যে কনভেনশন রয়েছে, তাতে ১৮ বছরের কম বয়সীরা এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও তরুণরা এ সময় তারা জীবনের দুটি ধাপে পদার্পণ করেশৈশবকাল থেকে প্রাপ্তবয়সকাল। এই মধ্যবর্তী সময়ে তারা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তারা প্রায়ই শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারে সম্পূর্ণ অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি কখনো কখনো ক্রোধ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।


ফলে তরুণ-তরুণীদের মাঝে তাদের বয়সের কারণে যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তারা মনে করে, তরুণদের প্রতি বৈষম্য মোকাবেলায় এবং তাদের অধিকারচর্চায় বাধা দেয় এমন বাধাগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

এ অধিকারগুলো তিনটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে: () খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ইত্যাদির মতো সুবিধা ও পরিষেবাগুলোয় অল্পবয়স্ক মানুষের প্রবেশ রক্ষা করা; () শারীরিক, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা; এবং () তাদের সিদ্ধান্ত মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করে দেয়া, যা তাদের পুরো জীবনে প্রভাবিত করে।

এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ২০১৯ সালে লিসবোয়া +২১ ঘোষণায় সব পর্যায়ে (স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক) তরুণ জনগোষ্ঠীর অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এ-জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে চরমপন্থা ও মৌলবাদের মতো ধারণাগুলো খুব সহজেই মনের ভেতর প্রবেশ করে। এটিই তারুণ্যে চরিত্র গঠনে সব বিনিয়োগের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, তরুণদের অধিকারের মূলধারার প্রথম বড় পদক্ষেপটি ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের রেজল্যুশন ৫০/৮১ পাসের মাধ্য?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন