জেপি মরগানের জরিপ :

এশিয়া-প্যাসিফিকের উদ্যোক্তাদের উদ্বেগের কেন্দ্রে বৈশ্বিক মন্দা

বণিক বার্তা ডেস্ক

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক মন্দার সম্ভাবনা ও বাণিজ্য শুল্কের প্রভাবকে আগামী ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে নিজেদের কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছেন। সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

জেপি মরগান এশিয়া-প্যাসিফিক সিএফও এবং সাংহাইভিত্তিক ট্রেজারার্স ফোরাম চলতি বছর জরিপটি পরিচালনা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত ১৩০টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রায় ৩০ শতাংশের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ও গ্রুপ ট্রেজারাররা জানিয়েছেন, তারা একটি সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা নিজেদের ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২৭ শতাংশের প্রধান উদ্বেগে পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব। অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা উদীয়মান বাজারগুলোর মন্দা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এছাড়া ১০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর কাছে ব্যবসার জন্য প্রধান উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার হুমকি। জরিপে অংশগ্রহণকারী বাকি ৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করছে ব্রেক্সিট ও ইউরো অঞ্চলের অনিশ্চিত ভবিষ্যেক।

এক বিবৃতিতে জেপি মরগানের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের করপোরেট ব্যাংকিং প্রধান অলিভার ব্রিংকম্যান বলেন, সামষ্টিক বৈশ্বিক পরিস্থিতির অস্থিরতার প্রভাব আন্তর্জাতিক করপোরেশনগুলোর সিএফও এবং ট্রেজারারদের কেন্দ্রীয় ও প্রধান উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, জেপি মরগান একটি মন্দার পূর্বাভাস না দিলেও আগামী প্রান্তিকগুলোয় প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জন্য ২ দশমিক ৭ শতাংশ ও আগামী বছর আরো কমে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকটি।

এদিকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির মন্থরগতি পাল্টে দিতে নীতিনির্ধারকদের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে আবারো একটি মন্দার মুখে পড়ার সম্ভাবনাঅস্বস্তিকর রকমের বেশি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে ২০১৯ ও ২০২০ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এছাড়া এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়েও মন্থর হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক বাজারগুলোকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসাগুলোর জন্য বিশাল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে কিছু অগ্রগতি দেখা গেলেও পারস্পরিক পণ্য আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আরোপিত শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে।

এর বাইরে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাও রয়েছে। ব্রেক্সিটের নির্ধারিত সময়সীমা এক দফা পিছিয়ে ৩১ অক্টোবর করা হলেও যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগ আবারো পেছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সময় বিশ্বের বৃহত্তম রফতানিকারক চীনের অর্থনীতি ক্রমে মন্থর হয়ে পড়ছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে জেপি মরগানের জরিপের ৩৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে, সরবরাহকারীদের সঙ্গে মূল্যনির্ধারণের বিকল্পগুলো অন্বেষণের মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নের মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ৩২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে, বর্তমানে তারা সরবরাহের বিকল্প উৎস অনুসন্ধান করছে।

১৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে, সমস্যার মোকাবেলায় তারা চীন থেকে অন্যান্য দেশে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন