একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বাদীকে হত্যাচেষ্টা

হামলাকারীদের শনাক্ত করতে না পেরে তদন্ত বন্ধের আবেদন পুলিশের

আদালত প্রতিবেদক, বণিক বার্তা

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহত ও মামলার বাদী আলহাজ্জ বদর আজিজ উদ্দিনকে (৪৫) ২০১৭ সালে হত্যাচেষ্টায় হামলাকারীদের শনাক্ত করতে না পেরে পুলিশ মামলার তদন্ত বন্ধের আবেদন করেছেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ (পূর্ব) এর উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. এরশাদ হোসেন চলতি বছর ১ আগস্ট এ আবেদন করেছেন।

আজ রবিবার ওই প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে ঢাকা সিএমএম আদালতে শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিকালে ভিকটিম আলহাজ বদর আজিজ উদ্দিন এবং মামলার এজাহারকারী তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে প্রতিবেদনের উপর শুনানিকালে এজাহারকারী পুলিশ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন জানিয়ে নারাজি দাখিল করবেন বলে জানালে বিচারক আগামী ১ ডিসেম্বর নারাজি দাখিলের শুনানির দিন ধার্য করেন।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার খুটিখালী গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী বদর আজিজ উদ্দিন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। এখনো তিনি শরীরে গ্রেনেডের স্পিন্টার বহন করে চলেছেন। ঘটনার পর ২০০৭ সালের ৫ জুন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি পিটিশন মামলা করেন। আদালত মামলাটি থানায় দায়ের হওয়া মামলার সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন। 

ওই মামলায় আজিজ উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও প্রদান করেন। আদালতে ওই মামলা করার পর থেকে তিনি বিভিন্ন দিক থেকে হত্যার হুমকি পেতে থাকেন। ২০১৭ সালে তিনি যাত্রাবাড়ী থানাধীন পূর্ব শেখদী রহমাত সাহেবের বাড়িতে থাকাকালীন ওই বছর ২৫ আগস্ট সকালে চাঁদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে শেখদী আব্দুল্লাহ মোল্লা রোডস্থ ফার্নিচার কারখানার সামনে আসলে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের হামলার শিকার হন। দুষ্কৃতিকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া দিয়ে পেটে ও পিঠে ৯টি আঘাত করেন। সেসময় এক মাস ১০ দিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। 

ওই ঘটনায় তার স্ত্রী  জান্নাতুন নাহার (৩৫) যাত্রাবাড়ী থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তদন্তকালে পুলিশ মো. রাব্বি, সৌরভ চন্দ্র দাস, মেহেদী আলম সাগর ও হাসান মঙ্গল ওরফে মঙ্গল ডাকাতকে ২০১৭ সালেরই গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আসামিরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। 

মামলটির তদন্ত শেষে চলতি বছর ১ আগস্ট ডিবি পুলিশ (পূর্ব) এর উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. এরশাদ হোসেন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সেখানে তিনি ‘হামলার ঘটনা সত্য, তবে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামিরা এ ঘটনায় জড়িত নয় মর্মে তাদের অব্যাহতি দেয়াসহ মামলার তদন্ত মূলতবি রেখে সরকারি অর্থের অপচয় এবং সময়ের অপচয় রোধ করার আবেদন করেন।

এ সম্পর্কে ভিকটিম বদর আজিজ উদ্দিন বলেন, একটি অপরাধের ঘটনা ঘটল, তদন্তে তা সত্য হলো। কিন্তু অপরাধীদের শনাক্ত করতে না পেরে মামলার তদন্ত বন্ধ করে দেয়ার পুলিশের আবেদন লজ্জাজনক। এ ঘটনায় আমি ১ মাস ১০ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলাম। এর বিচার হবে না এটা হতে পারে না। 

তিনি আরো বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা করা এবং সাক্ষী দেয়ার জন্যই আমার উপর হামলা হয়েছিল। আমি তাই লড়ব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন