উন্নয়ন শব্দটি এখনকার সময়ে অতীতের চেয়েও ব্যাপক সামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও মানসিক বিভিন্ন বর্গে বা স্তরে আলোচিত ও সমালোচিত। এটি কেবল অর্থনীতির সঙ্গেই যুক্ত নয়। ‘উন্নয়ন’ বলতে সহজে যা বোঝায়, সেটা কোনো কিছুর ইতিবাচক রূপান্তর বা পরিবর্তনকে সূচক ধরে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই উন্নয়নের একটি অর্থ করেন যে ‘উন্নয়ন’ ধনী উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোর পক্ষে নতুন উপনিবেশ প্রথাকে বজায় রাখার এক রকমের হাতিয়ার। উন্নয়নের সংজ্ঞা এবং এর দর্শন নিয়ে ধ্রুপদি অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ থেকে শুরু করে ডেভিড রিকার্ডো, স্টুয়ার্ড মিল ও কার্ল মার্ক্সের নানা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আছে। কার্ল মার্ক্সের অনেক অনুসারী মনে করেন, মানবসভ্যতায় সমাজ বা ব্যক্তির উন্নয়নে শোষণ ও ব্যক্তি (প্রাইভেট) সম্পদের গ্রোথ এবং এর বিভাজনে বৈষম্য দিয়ে উন্নয়নকে মাপা হয়। এডাম স্মিথের An inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations বইয়ে আবার জাতিগুলোর ধন-দৌলতের প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান করা হয়। যাহোক, এ আলোচনায় রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনে বা উন্নতিতে সমাজ ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের (প্রাইভেট ইনস্টিটিউশন) গঠন বা প্রকৃতির কী ভূমিকা, এটা নিয়ে কিছু কথা। ২. সমাজ ও একটি রাষ্ট্র কতটা কোন দিকে উন্নত বুঝতে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শ্রেণী সংগঠনের এবং উৎপাদন অবকাঠামো, সমাজ আদর্শ ও শিক্ষামানের ক্ষেত্রগুলোর কথা এসে যায়। সমাজবিজ্ঞানে একে সামাজিক স্তর বিন্যাস (সোস্যাল স্ট্রাকচার) বলে। এ সমাজ বা সামাজিক স্তরবিন্যাসকে বুঝতে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাসকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে আমাদের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থা এবং এর স্তরবিন্যাসকে বুঝলে এর আর্থিক উন্নয়ন বা সমাজ উন্নয়নের অন্যান্য ব্যারোমিটারের মানসিক গড়নটাও বোঝা যাবে। সেই গড়ন ও ধরনের ওপর নির্ভর করেই সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্যক্তি-উদ্যোগ ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে প্রভাব ও ভূমিকা রাখে কিনা, বিষয়টা স্পষ্ট হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ড. রঙ্গলাল সেন মধ্য আশির দশকে তার বিভিন্ন সমাজ গবেষণামূলক প্রবন্ধে ‘বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাস’ নিয়ে যা লিখেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে আসে যে শুরু থেকেই আমরা এক প্রকার শোষণমূলক ও বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রতি ঝুঁকে আছি। যে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য