বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম আর গতি নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যয় প্রতিবেশীদের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। আয়ের বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে এর পেছনে। অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেটের (এ৪এআই) অ্যাফোর্ডেবিলিটি ড্রাইভার্স ইনডেক্সে (এডিআই) এ তথ্য উঠে এসেছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১৩৬টি দেশের মানুষের ইন্টারনেট ক্রয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এডিআই-২০১৯ প্রকাশ করা হয়েছে। যেসব দেশের মানুষের গড় মাসিক আয়ের ২ শতাংশের বেশি ১ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট ডাটা কিনতে ব্যয় হয় না, সেসব দেশকে ইন্টারনেট অ্যাফোর্ডেবল দেশের তালিকায় এগিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের বিস্তার ও দামের ক্ষেত্রে কার্যকর সরকারি নীতিমালা ও উদ্যোগ এবং ইন্টারনেট অবকাঠামো খাতে অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর র্যাংকিং করা হয়। যে দেশ যত বেশি পয়েন্ট অর্জন করেছে, তালিকায় দেশটি তত এগিয়ে রয়েছে। একথা সত্য, দেশে ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমিয়ে এনেছে সরকার। পাশাপাশি ওয়াইম্যাক্স ও থ্রিজির মতো তারবিহীন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। ফলে সেবাটির গ্রাহকও বেড়েছে। আর ইন্টারনেট গ্রাহকের সিংহভাগই সেলফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে। থ্রিজি প্রযুক্তি চালু অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবা আরো সম্প্রসারণের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপারেটররা ব্যবসা করলেও বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহক।
ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান ও ব্যবহারসংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর ভ্যাট-সারচার্জ আরোপ করায় ইন্টারনেটের ব্যয় বাড়ার শঙ্কা জোরদার হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এসব কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে। চলতি বছরের নতুন আইনের ফলে ভ্যালু চেইনের কয়েকটি লেয়ারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
সরকার যেখানে চেষ্টা করছে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার, সেখানে ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ সংগতিপূর্ণ নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ইন্টারনেট সেবায় ভ্যালু চেইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতে এক ধরনের একক নির্ভরশীলতা ও প্রতিযোগিতাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ খাতে সরকারের প্রধান দুটি অগ্রাধিকার, যেমন তৃণমূলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া এবং গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো, সন্তোষজনক জায়গায় যেতে পারছে না।
সুস্থ প্রতিযোগিতা নীতিমালা আর বড়দের ক্ষমতার অপব্যবহার নজরদারিতে নিয়ে এলে অপারেটররা নিজেরাই দাম কমিয়ে আসল দামের কাছে নিয়ে আসবে বলে অনেকে মনে করেন। আসল মানে প্রডাকশন কস্টের কাছাকাছি। সুস্থ প্রতিযোগিতার নীতিমালা মানলে খরচ কমে আসবে অপারেটরদের। সুস্থ প্রতিযোগিতা মাপার অংক আছে একটা। নাম হার্সম্যান হারফিন্ডল ইনডেক্স। সংক্ষেপে এইচএইচআই। এর মান শূন্য হলে বোঝা যায়, বাজারে ছোট কোম্পানি আছে অনেক। ১০ হাজার হলে বাজারটা চলছে পুরো মনোপলিতে। ইন্টারনেট সেবা খাতে সরকারি কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এটা সরাসরি জনগণের আর্থিক সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। টেলিকম সেবা খাতে প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত করে দেয়া, কার্যকর টেলিকম অবকাঠামো নির্মাণ, তরুণদের ডিজিটাল স্কিল উন্নয়নসহ নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে মানুষের ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে পারে সরকার।
স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পাঁচটি বিষয়কে এক্ষেত্রে সাফল্য লাভের মূল চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো,