স্লিপিং বিউটি সিনড্রোম

এমএ মোমেন

বেথ গুডিয়ার তো টানা ঘুমিয়ে পার করে দিল ছয় মাস। রামায়ণের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙে ছয় মাস পর। বেথ গুডিয়ার যখন ঘুমন্ত তাকে দারুণ দেখায়, রাজকন্যার মতোই। কিন্তু কালে দুনিয়াজুড়ে দু-চারটে অথর্ব রাজপুত্র ছাড়া যোগ্য কেউ নেই যে এক চুমোতে তাকে জাগিয়ে তুলবে, সারিয়ে তুলবে, ভালোবাসবে, বিয়ে করবে

বাংলাদেশেও অন্তত ১০ প্রজন্ম ধরে কোনো কোনো ধরনের ঘুমন্ত সুন্দরীর কাহিনী বর্ণিত শ্রুত হয়ে আসছে। সাহিত্যের অনুসন্ধিত্সু গবেষকদের মধ্যে প্রথম লিখিত ঘুমন্ত সুন্দরী কাহিনী ১৩৩০ থেকে ১৩৩৪-এর মধ্যে ইতালিতে প্রকাশিত হয়েছে।

গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ঘুমন্ত সুন্দরী পাঠক পেয়েছে। অন্তত ৪১০ রকমের স্লিপিং বিউটির সন্ধান মিলেছে।

সংক্ষেপে গল্পটি স্মরণ করে নেয়া যাক

বিষণ্ন রাজ্যে, বিষণ্ন রাজপ্রাসাদে নিঃসন্তান রাজা রানী সন্তানের জন্য অনেক চেষ্টা তদবির করলেন, পবিত্র স্থানগুলোয় গিয়ে ধরনা দিলেন। একসময় ভাগ্য প্রসন্ন হলো, রানী গর্ভবতী হলেন। একটি ফুটফুটে মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করল।

রাজকন্যার জন্মে বড় উৎসব তো হবেই, উৎসবে আমন্ত্রিত সাত পরীর জন্য মূল্যবান পাথর বসানো সোনার থালা থাকবে। সোনার চামচ, সোনার ছুরি থাকবে। তারা হবে রাজকন্যার ধর্ম-মা।

ভোজের দিন সবাইকে অবাক করে হাজির এক থুত্থুড়ে পরী, চোখে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি। অন্যরা তাকে বের করে দিতে চাইলেও রাজা বললেন, বসিয়ে খাওয়াও। কিন্তু বাড়তি কোনো সোনার থালা তো নেই।

ভোজ শেষে সবচেয়ে ছোট পরী বাদে অন্য ছয়জন তাকে তাদের শ্রেষ্ঠ উপহার দিল। একজনের উপহার তাকে সবচেয়ে সুন্দরী করবে, একজনের ওপর তাকে দেবদূতের বুদ্ধি দেবে। রকম চলতে চলতে ছোট পরী পর্যন্ত এসে সে থমকে দাঁড়িয়ে রইল। তার দেরি দেখে থুত্থুড়ে পরী এসে অভিশাপ দিল, চরকার কাটা আঙুলে ফুটে রাজকন্যার মৃত্যু হবে।

বিষণ্ন ছোট পরী বলল, আমি তো এই অভিশাপ খণ্ডাতে পারব না, তবে এমন ব্যবস্থা করব যাতে রাজকন্যার মৃত্যু না হয়। শতবর্ষ সে ঘুমন্ত থাকবে, তারপর এক রাজপুত্র এসে এক চুম্বনে তাকে জাগিয়ে তুলবে।

রাজ্য থেকে সব চরকা ধ্বংস করার পরও থুত্থুড়ে পরীর চালে রাজপ্রাসাদের ভেতরেই চরকার কাঁটার ঘায়ে রাজকুমারী অজ্ঞান হয়ে গেল, অজ্ঞান প্রাসাদের অন্যরাও। ছোট পরী এসে রাজকন্যা ছাড়া সবাইকে জাগিয়ে তুলল। প্রাসাদ ছেড়ে যাওয়ার আগে রাজা আদেশ দিলেন প্রাসাদের চারদিকে কাঁটা গাছ এমনভাবে রোপণ করা হবে, যেন কেউ ভেতরে এসে রাজকন্যার দেখা না পায়।

শতবর্ষ পর এটা নিবিড় বন আর প্রেতপুরী হয়ে উঠল। রাজকন্যার কাহিনী বংশপরম্পরায় এক রাজপুত্র শুনল এবং তাকে উদ্ধারের অভিযানে বের হলো। ভূত-প্রেত-দানব এসবের পরোয়া না করে বনবাদার ডিঙিয়ে সে পরিত্যক্ত প্রাসাদে ঢুকল এবং ঘুমন্ত ১৫ বছর বয়সী রাজকন্যাকে এক চুমোতে জাগিয়ে তুলল।

সেই সন্ধ্যায় তাদের বিয়ে হলো। ভয়ংকর অভিযান শেষে ক্লান্ত রাজপুত্র ঘুমিয়ে পড়ল, আর ১০০ বছর পর ঘুম থেকে জেগে ওঠা রাজকন্যার চোখে ঘুম নেই, আছে কেবল মধুর স্বপ্ন।

পরদিন রাজপুত্র ঘুম থেকে জেগে ওঠা রাজকন্যাকে নিয়ে চলে এল নিজেদের দুর্গে। আর তাদের ফেলে আসা পুরনো পরিত্যক্ত রাজপ্রাসাদ, অরণ্যসব কিছু কোথায় যে মিলিয়ে গেল কারো চোখেও পড়ল না।

হচ্ছে স্লিপিং বিউটির কাহিনী। কিন্তু একালে থুত্থুড়ে মন্দ পরী আর তার চরকার দরকার হয় না। এমনিতেই ঘুম ভাঙে না দিনের পর দিন।

বেথ গুডিয়ার তো টানা ঘুমিয়ে পার করে দিল ছয় মাস। রামায়ণের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙে ছয়

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন