সম্মান রক্ষায় নুসরাতের লড়াই ইতিহাস হয়ে থাকবে: আদালত

বণিক বার্তা অনলাইন

বহুল আলোচিত ফেনী সোনাগাজী মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘নুসরাত তার সম্মান রক্ষার জন্য যে লড়াই করেছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ এ রায় দেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক দণ্ড দেয়া হয়েছে। 

চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে মাত্র ৫০ দিনের মাথায় দেয়া হয় চার্জশিট। আর ছয় মাসের মাথায় আজ মামলার রায় ঘোষণা করা হল। বিচারক মো. মামুনুর রশিদ আজ বেলা ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে রায় পড়া শুরু করেন। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের চুম্বক অংশ পাঠ করেন তিনি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি আরো বলেন, ‘আসামিরা যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন তা সকল মানবিকতাকে হার মানিয়েছে।’ শুরু থেকেই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি মানুষের সামনে আনার জন্য সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান বিচারক। 

এ ঘটনায় গাফিলতি করায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তিরষ্কারও করেছেন আদালত। বিচারক মো. মামুনুর রশিদ পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এ ঘটনায় তৎকালীন ওসি গাফিলতি করেছেন।’ ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না ঘটে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন তিনি।

আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, ‘ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যায়। আর সেখানে গিয়ে শিক্ষকের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়, শিক্ষকের লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাতে মারা যায়। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।’

নুসরাত হত্যা মামলায় বাদীপক্ষে ছিলেন বিচারিক আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহমেদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট এম শাহ জাহান সাজু। আর আসামিপক্ষে ছিলেন হাইকোর্টের আাইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ ও এনামুল হক, ফেনী আদালতের সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, নূরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন নয়ন ও মাহফুজুল হক, আহসান কবির বেঙ্গল, সিরাজুল হক মিন্টুসহ ২০ জন আইনজীবী।

এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে মামলার ১৬ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। এর ৫ মিনিট পর বিচারক রায় পড়া শুরু করলে ১৬ আসামিকে কাঠগড়ায় তোলা হয়।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে এবছর আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নুসরাত। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা মামলা করার পর গত ২৭ মার্চ পুলিশ গ্রেফতার করে অধ্যক্ষ সিরাজকে। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর তার পক্ষে নামে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনেও সক্রিয় ছিল মাদরাসার কিছু শিক্ষার্থী। মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বলে নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ। এর মধ্যেই ৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষা কেন্দ্র সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে কৌশলে ডেকে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় নুসরাতের শরীরে। মুমূর্ষু অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল ঘুরে নুসরাতকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। ৮ এপ্রিল আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই।

মুমূর্ষু নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়ে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত। আগুনে পোড়ার আগে নুসরাত থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তার বক্তব্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে প্রত্যাহার হয় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন