সরবরাহ সংকটের শঙ্কায় ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি ওপেক ও ওপেক প্লাস দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে সম্ভাব্য সরবরাহ সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি ও যুক্তরাষ্ট্র পণ্যটির মজুদ বাড়ানোর জেরে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। খবর রয়টার্স ও অয়েল প্রাইস ডটকম।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২১ অক্টোবর কার্যদিবস শেষে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় ৭৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৯ ডলার ৭০ সেন্টে কেনাবেচা হয়। একই দিনে ইউএস টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৫৪ ডলার ১৬ সেন্টে লেনদেন হয়।

জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে ওপেক (জ্বালানি তেলের শীর্ষ উত্তোলন ও রফতানিকারক দেশের সংস্থা) জানায়, বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতিতে আগামী বছরে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এতে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ওপেকের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় চাহিদা দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ৯৬ লাখ ব্যারেলে, যা চলতি বছর থেকে ১২ লাখ ব্যারেল কম।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ওপেক ও রাশিয়াসহ অন্য উত্তোলনকারী দেশগুলোর (ওপেক প্লাস) মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন সম্মেলনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন ও বাজার স্থিতিশীলতা রক্ষায় উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ওপেক মহাসচিব মুহাম্মাদ বারকিনদো।

উল্লেখ্য, চাহিদা কমে আসায় কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। এ কারণে সরবরাহ সংকট তৈরির মাধ্যমে পণ্যটির দাম ধরে রাখতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওপেক ও ওপেক প্লাস দেশগুলো দৈনিক সম্মিলিত উত্তোলন ১২ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ চুক্তিটির মেয়াদ আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত। যদিও এ কৌশল পণ্যটির বাজারে কার্যকর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিলেন ওপেক মহাসচিব।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য সরবরাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই পণ্যটির দাম বেড়েছে, তবে এ কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরো দুটি বিষয় প্রভাব রেখেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। একটি ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত এবং অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মজুদ বৃদ্ধি।

চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী লি ইউচেং সম্প্রতি বলেন, উভয় পক্ষ যতক্ষণ পরস্পরকে সম্মান করবে, ততক্ষণ এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। এ মন্তব্যকে অনেকেই দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্য চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান হিসেবে দেখছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সম্প্রতি পূর্বাভাস করে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ ও বিশ্বজুড়ে চলমান বিভিন্ন বাণিজ্য বিরোধের কারণে এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশকের সর্বনিম্নে নেমে আসবে। এর প্রভাবে মানুষের ক্রয় সক্ষমতা কমে বিভিন্ন পণ্য যেমন জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে আসবে।

ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইএইএ) পূর্বাভাস করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়াবে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটিতে পণ্যটির মজুদ বেড়ে ৪৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন