বর্ণহীন বর্ণবাদের আলাপ

হাসান মাহমুদ

সম্প্রতি বাংলাদেশে বর্ণবাদের উদাহরণ খুঁজলে সবার আগে আসবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আমাদের অনেকের আচরণ ও কথাবার্তা।বর্ণবাদ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত সবাই একমত হবেন যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জাতিগতভাবেই নিচু সংস্কৃতির মানুষ বলে মনে করাটা বর্ণবাদী। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সন্ত্রাসী, পঙ্গপালের মতো সন্তান জন্ম দিয়ে আমাদের দেশ একসময় দখল করে নেবে, আমাদের উপরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বোঝা হিসেবে চেপে বসবে ইত্যাকার নানা কথাবার্তা এখন বেশির ভাগ পত্রিকায়ই দেখা যায়। জনপরিসরে আলাপচারিতায়ও এসব নিতে মাতামাতি হচ্ছে। এসব যে খারাপ তা সবাই বোঝে, যারা বলে এবং যারা শোনে উভয়েই জানে যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসব কথা নিন্দনীয়। কারণ এগুলো বর্ণবাদী কথাবার্তা। আর যারা এগুলো বলে, তারা বর্ণবাদী। তাদের জন্য আমাদের কাছে নিন্দা ছাড়া আর কোনো বিশেষণ নেই। তবে এ ধরনের প্রকাশ্য বর্ণবাদের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হলো সাহিত্যে, সমাজকর্মে, রাজনীতিতে জাতীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুক্কায়িত বর্ণবাদ; যা সচরাচর চিহ্নিত করা যায় না। ফলে সেসব ব্যক্তিত্বের কথা, কাজ ও নীতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে তাদের হাজার হাজার গুণমুগ্ধ অনুসারীও অজান্তেই বর্ণবাদী ধারণা আত্মস্থ করে। তাই আমি মনে করি, বর্ণবাদ কী, কোত্থেকে এর উত্পত্তি আর কেন একে এড়িয়ে চলা উচিত, ব্যক্তিমানস, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে কীভাবে এটি দূর করা সম্ভবএসব বিষয় নিয়ে আলাপ করা জরুরি।

বর্ণবাদ শব্দটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় প্রায় ২৫ বছর আগে ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে আংকেল টমস কেবিন নামের একটা ছোট্ট গল্পের মধ্য দিয়ে। জেনেছিলাম আমেরিকায় কালো মানুষদের গরু-মহিষের মতো কেনাবেচা করা হয়, খেতে-খামারে পশুর মতো খাটানো হয়, গোয়ালঘরের থেকেও খারাপ কঠুরিতে রাখা হয়। মনিবের চাহিদামতো সর্বোচ্চ শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারলে পশুর মতো পেটানোসহ আরো যত প্রকার শারীরিক শাস্তি কল্পনা করা সম্ভব, তার সবই প্রয়োগ করা হয়। সে সময় বই পড়ে এসব কল্পনা করতাম আর আমেরিকার দাসপ্রথার মধ্যে শৃঙ্খলিত কালো মানুষদের জন্য দুঃখবোধ করতাম। এখন সিনেমায়ও দেখা যায় আফ্রিকা থেকে ধরে নিয়ে আসা কালো মানুষদের ওপর দাস মালিক সাদা মানুষদের সেইসব অত্যাচারের কাহিনী, যা বিবেকবান যে কাউকে নাড়া দেবে।

কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় শাড়ি নিয়ে একটা প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। লিখেছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক, আলোকিত মানুষ তৈরির কারিগর হিসেবে বরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তার চিরাচরিত ঝরঝরে, সুখপাঠ্য গদ্য আর নান্দনিক বিশেষণ সম্ভারে চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায় তিনি শাড়িকে প্রথমে চিত্রিত করেছেনপৃথিবীর সবচেয়ে আবেদনময় অথচ শালীন পোশাক। শুধু শালীন নয়, রুচিসম্পন্ন, সুস্মিত ও কারুকার্যময় পোশাক হিসেবে। এরপর শাড়িকে বাঙালি নারীরপ্রকৃতিগত পোশাক, তাদের সহজাত রূপের অংশ হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি নারীকেও একই মহিমায় উপস্থাপন করতে চেয়েছেন, অন্তত তার গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রী ও সাহিত্যানুরাগীরা এভাবেই প্রবন্ধটি পাঠ করতে চান। কিন্তু যে কারণে আবু সায়ীদ শাড়িকে বাঙালি নারীর প্রকৃতিগত ও সহজাত পোশাক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তা নির্জলা বর্ণবাদী। স্বভাবতই লেখাটি বিতর্কিত হয়েছে, লেখক হিসেবে আবু সায়ীদের আলোকিত মানুষ পরিচয়ের সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে, এমনকি তার গুণমুগ্ধ ছাত্রীদের অনেকেই তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, ‘স্যার ওভাবে না বললেও পারতেন। আমি বলি, না, তিনি পারতেন না। কারণ তিনি বাঙালি নারীকে দেখেন প্রকৃতিগতভাবেই অসুন্দর বলে; যারা বেঁটেখাটো, যাদের দেহসৌষ্ঠব অবিন্যস্ত। তাই তিনি উল্লেখ করেছেন, “শারীরিক অসমতার এত ঘাটতি থাকার পরও অন্যান্য মেকআপের মতো রূপকে নিটোলতা দেওয়ার মতো এক অনন্য সাধারণ মেকআপ রয়েছে বাঙালি মেয়েদের ভাঁড়ারে। আমার মতে, এর নামশাড়ি আপাতদৃষ্টিতে এই বয়ানকে নিরীহ, এমনকি ক্ষণিকের জন্য প্রশংসাসূচক মনে হলেও তা আদতে বাঙালি নারীর প্রতি চরম অবজ্ঞামূলক। আর যে মন, যে জ্ঞান, যে উপলব্ধি থেকে এই বাক্য উৎসারিত হয়েছে, তা বর্ণবাদী।

আধুনিক সমাজের বর্ণবাদ জন্মলাভ করেছে ইউরোপীয় সাদা মানুষদের হাতে বন্দি আফ্রিকার কালো মানুষদের দাস হিসেবে আমেরিকায় স্থানান্তর এবং তাদের দিয়ে পশুর মতো হালচাষ করানোর ব্যবস্থার মধ্যে। আর সেইসব কালো মানুষকে পশুজ্ঞান করে তাদের প্রতি সেই মতো ব্যবহার করার রীতিনীতিকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে স্থায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তত্কালীন আইনে, লোকাচারে, বিশ্বাসে। ২০০ বছর একাদিক্রমে ক্ষেতে-খামারে পশুর মতো খাটতে খাটতে, সাদা দাস মালিকদের কাছ থেকে পশুর মতো ব্যবহার পেতে পেতে এসব কালো মানুষ ভুলে গিয়েছিল তাদের মাতৃভাষা, আবার ইংরেজিকেও আয়ত্ত করার সুযোগ পায়নি। এরা ভুলে গিয়েছিল সভ্য-সাধারণ মানুষের মতো জীবনাচরণ। এই থেকে ক্রমে সাদা মানুষরা, দাস মালিকরা এ বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে কালো মানুষরা মানুষ পদবাচ্যই নয়। এরা বড়জোর ঊন মানুষ। অতএব, তাদের প্রতি যাবতীয় পাশবিক ব্যবহার করা যথার্থ।

সমাজে একটা দল বা গোষ্ঠীর সব মানুষকে তাদের গায়ের রঙের পার্থক্যের ভিত্তিতে আলাদা করে দেখার এই যে রীতি, এটা আমেরিকার অধিকাংশ সাদা মানুষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কালো মানুষও স্বাভাবিক হিসেবে আত্মস্থ করে নেয়। ফলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করার পরেও সেখানে গায়ের রঙের ভিত্তিতে সামাজিক বিভাজন এবং উঁচু-নিচু ভেদাভেদ চলেছে আরো ১০০ বছর, বিবিধ সামাজিক রীতিনীতি আর আইনকানুনের মধ্য দিয়ে সামাজিক প্রথা হিসেবে। মাত্র সত্তরের দশকে সিভিল রাইটস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমেরিকার বর্ণভেদকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে কালো আমেরিকানদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া শুরু হয়েছে। সিভিল রাইটস আন্দোলনের ভিত্তিমূলে যেসব মূল্যবোধ, যথা সর্বজনীন সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য, তা কালো আমেরিকানদের প্রতি সাদাদের আচরণকে অমানবিক, অতএব অগ্রহণযোগ্য এবং অন্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।  

গায়ের রঙ অর্থাৎ জন্মগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সমাজে একেকটা জাতি, দল বা গোষ্ঠী হিসেবে আলাদা করে শ্রেণীবিন্যস্ত করা, অতঃপর সেইসব শ্রেণীকে ভালো-মন্দ, উঁচু-নিচু ইত্যাদির মাপকাঠিতে বিবেচনা করার যে রীতি বা প্রবণতা দেখি, তাকেই নৃবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় বর্ণবাদ। এর শুরু হয় নিরীহ দর্শন পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যাবলি চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে। মানুষ হিসেবে আমরা স্বাভাবিকভাবেই সবকিছুকে ক্লাসিফাই বা শ্রেণীবিন্যস্ত করি হিসাব রাখার সুবিধার্থে, বোঝার সুবিধার্থে। যেমন চালের বাজারে গেলে চালের রঙ, আকৃতি, সুবাস, স্বাদ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আমরা চালের শ্রেণীবিভাগ করি, আলাদা আলাদা চালের চাহিদা ও জোগান অনুযায়ী ভালো-মন্দের বিবেচনা আরোপ করি। একইভাবে আর প্রায় সব পণ্য, বস্তু, স্থান ইত্যাদির মধ্যে এদের নিজ নিজ প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভালো-মন্দের শ্রেণীবিভাজন করি এবং সেই মতো তাদের প্রতি আমাদের আচার-ব্যবহারও হয় আলাদা আলাদা। যেমন সবচেয়ে ভালো বস্তুটি পেতে আমরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করি, আর খারাপটির দিকে ফিরেও তাকাই না।

মানুষের মাঝেও আমরা নানা রকম বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করি। তাদেরকে পৃথক পৃথক শ্রেণীতে বিভক্ত করি। ভালো-মন্দের ভিত্তিতে উঁচু-নিচু ভেদাভেদও আরোপ করি। বাস্তবিক প্রয়োজনেই। যেমন ইন্টারভিউ করে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে চাকরির জন্য বাছাই করি। কিন্তু এভাবে পার্থক্য করা আর উপরে উল্লিখিত পণ্য, বস্তু বা প্রাণিজগতে পার্থক্য আরোপ করা মৌলিকভাবে আলাদা। চালের যে বৈশিষ্ট্য তা প্রাকৃতিক, অশ্বের যে শক্তি তা প্রাকৃতিক, গোলাপের যে সৌন্দর্য তাও প্রাকৃতিক। এসব গুণ বা ত্রুটিবাচক বৈশিষ্ট্যে এদের কোনো হাত নেই। ফলে বিশেষ কোনো শ্রেণীর যাবতীয় চাল একই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ভালো হলে ভালো, মন্দ হলে মন্দ। কিন্তু মানুষকে বিবেচনা করার বেলায় আমরা পরিচালিত হই একটা সর্বজনীন মূল্যবোধ দ্বারা। এটি হলো, জগতের সব মানুষ সমান, জন্মগতভাবে সামর্থ্যের বিচারে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। এই থেকে আমরা আরো একটি মূল্যবোধ ধারণ করি যে মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ করি, তা মূলত ব্যক্তির নিজ নিজ কর্মের ফল। যেমন কেউ পরীক্ষায় প্রথম হলে কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করলে আমরা পুরস্কৃত করি। কিন্তু কেউ ব্যর্থ হলে আমরা তাকে তিরস্কার করি না, কেবল নির্ধারিত পুরস্কার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয় এবং পরবর্তীতে আবার প্রতিযোগিতায় আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়। সাফল্য প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবার, আত্মীয়-প্রতিবেশী-দেশকেও সম্মানিত বা সম্মান থেকে বঞ্চিত করলেও আমরা সবাই বুঝি যে আসল প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিটা ব্যক্তির। আমরা বিশ্বাস করি যে সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি তার মর্যাদা অর্জন করে বা হারায়। আর সেইসব প্রতিযোগিতায় সব ব্যক্তির অংশগ্রহণ করার অধিকার সমান। যখন আমরা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার আগেই কাউকে অযোগ্য বলে বাতিল করে দিই, সেটাকে বলি অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য। আর ব্যক্তিবিশেষের অযোগ্যতাকে যখন আমরা অনুমান করি তার জন্মগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে এবং তার গোত্রের সবাইকে একই রকম হিসেবে দেখি, সেটাই বর্ণবাদ। যেমন আফ্রিকার সব কালো মানুষের কিছু অংশকে দাস হিসেবে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে ২০০ বছর ধরে চরম অত্যাচারের জাঁতাকলে পিষ্ট করে তাদের সবাইকে অশিক্ষিত, অনগ্রসর জীবনযাপনের মধ্যে ঠেলে দিয়ে এখন পুরো আফ্রিকার কালো মানুষদেরই বর্বর বলে গণ্য করাটা হচ্ছে বর্ণবাদ। একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে বংশপরম্পরায় জাতপ্রথার নিষ্পেষণে রেখে নিচু জাত বলে পরিচিতদের মধ্যে অশিক্ষা, অনগ্রসরতা দেখে এগুলো তাদের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করাও বর্ণবাদ।

বর্ণবাদের সূচনা হয় নিরীহ একটা প্রবণতা থেকে, যাকে সমাজবিজ্ঞানে বলা হয় স্টেরিওটাইপ। এর অর্থ হলো, গুটিকয় ব্যক্তির মধ্যে বিশেষ কিছু লক্ষ করে সেটাকে তাদের সমগোত্রীয় সবার বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিশ্বাস করা। যেমন আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের আধিক্য দেখে এই বিশ্বাসে উপনীত হওয়া যে ভারতীয়রা জন্মগতভাবেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উপযুক্ত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। আবার একই অঞ্চলে মেক্সিকানদের গায়ে-গতরে খাটার পেশায় অধিক হারে দেখে এই বিশ্বাস করা যে মেক্সিকানদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য উপযুক্ত মেধার অভাব বিদ্যমান।  স্টেরিওটাইপের পরের ধাপটিই বর্ণবাদের সূচনা, যেখানে এসব প্রচলিত  স্টেরিওটাইপভিত্তিক বিশ্বাসের মাপকাঠিতে আমরা সমাজের নানা দলের মধ্যে, জাতির মধ্যে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ করি। অধিকাংশ বাঙালি নারীকে বেঁটেখাটো দেখতে পেয়ে তাদেরকে বেঁটেখাটো বলে একটা স্টেরিওটাইপ বা বিশ্বাস জন্মায়, যা কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। এটা বাস্তব, এখানে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এখান থেকে যদি অন্যান্য জাতির নারীদের সঙ্গে তুলনা করে বাঙালি নারীকে অসুন্দর, অনাকর্ষণীয়, অগ্রহণযোগ্য বলি, সেটা বর্ণবাদ। বাঙালি নারী অন্যান্য জাতির নারীদের তুলনায় নিজেদের সৌন্দর্যেরঘাটতিটি ঢেকে রাখার পোশাক হিসেবে শাড়ি পরে বলে অনুমান করাও বর্ণবাদী।

স্টেরিওটাইপ আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে আমরা যখন সমাজে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ করি এবং তদনুযায়ী কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই আবার কাউকে বিতাড়িত করি, সেটা অন্যায়। সমাজবিজ্ঞানে এর নাম বৈষম্য। মানুষ সবসময় এ বৈষম্যকে দূর করতে সচেষ্ট হয়েছে। সব যুগে দার্শনিক, ধর্মীয় নের্তৃত্ব, সমাজসংস্কারক সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টিকারী যাবতীয় বিষয় অমানবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্ণবাদও একইভাবে আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তে সংগ্রামী মানুষের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে।

বর্ণবাদ ঘৃণ্য হওয়া সত্ত্বেও সব সমাজেই নানা মাত্রায় এটি বিদ্যমান; সামাজিক পরিমণ্ডলে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়েসর্বত্র। কিন্তু সর্বজনীন মানবিক মূল্যবোধ তথাসকল মানুষ সমান’—এ বিশ্বাসের জন্য সর্বত্র বর্ণবাদকে উচ্ছেদ করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়; কোথাও আইনের মাধ্যমে আবার কোথাও নানা প্রকাশ সামাজিক বিধিনিষেধের মাধ্যমে। প্রাতিষ্ঠানিক বা সামাজিক পর্যায়ে বর্ণবাদ অনেক স্পষ্ট, যেমন মিডিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই সেইসব নেতিবাচক সংবাদকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে চিহ্নিত করেছেন। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় বিভাগের মাদ্রাসা থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাদের ভর্তি না করাও ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ এবং সচেতন অনেকেই এর নিন্দা করেছে। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা নিজ নিজ ভাবনাচিন্তাগুলো সংগোপনে লালন করতে পারি, সরাসরি কথায় বা কাজে প্রকাশ না করেও। আর এমন বর্ণবাদী ধ্যান-

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন