হিমায়িত মৎস্য রফতানিতে ধস

প্রক্রিয়াকরণ কারখানার সক্ষমতার ৮০% অব্যবহৃত

দেবব্রত রায় চট্টগ্রাম ব্যুরো

চিংড়িসহ হিমায়িত মৎস্য রফতানি অব্যাহতভাবে কমছে। ফলে মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো পড়েছে সংকটে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) হিসাবে দেশের ১১০টি কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৮০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকছে। অনেক কারখানা বন্ধের উপক্রম।

বিএফএফইএর তথ্যমতে, দেশের হিমায়িত মৎস্য রফতানির সিংহভাগ চিংড়ি। ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ হেক্টর ঘেরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আর চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াকরণের জন্য সারা দেশে আছে ১১০টি কারখানা। এসব কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ৩ লাখ টন। ৬০টির বেশি দেশে হিমায়িত মৎস্য রফতানি হয়। তবে বিদেশের বাজারে দেশীয় মেস্যর চাহিদা ও দাম কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরেই চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলের ঘের ও হ্যাচারিতে চিংড়িসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ছয় বছরে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি কমেছে ১৪ হাজার ২৭২ টন এবং রফতানি আয় কমেছে প্রায় ১৯ কোটি মার্কিন ডলার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৩৬৩ টন হিমায়িত চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এদিকে সাদা মাছের রফতানি কমলেও রফতানিমূল্য বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ১১ হাজার ৬৭৭ টন মাছ রফতানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি কমে ৯ হাজার ৭৪২ টনে নামলেও আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

রফতানিকারকরা জানান, ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দার কারণে বাংলাদেশের চিংড়ির অস্বাভাবিক দরপতন হয়। অন্যদিকে ভ্যানামি চিংড়ি (হোয়াইট লেগ শ্রিম্প) বাজার দখল করার কারণে প্রতি বছরই বাংলাদেশের রফতানি কমছে। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের মোট চিংড়ি উৎপাদনের ৭৭ শতাংশই ছিল ভ্যানামি চিংড়ি। সেখানে বাগদা ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, গলদা প্রায় ৫ শতাংশ। ভ্যানামি তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় বাংলাদেশের গলদা, বাগদা, হরিণা ও চাকা চিংড়ির চাহিদা কমেছে।

তারা আরো জানান, বিদেশে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নানা সময় ঘেরে মড়কের কারণে চট্টগ্রাম ও খুলনার খামারগুলোতে চিংড়ির উৎপাদন কমে গেছে। বাগদা চিংড়িতে লাভ না হওয়ায় চাষীরা ভেটকি, বেলে, ফাইসা ইত্যাদি মাছ চাষে ঝুঁকছেন। ভালো দাম পাওয়ায় তারা অন্যান্য মাছের পাশাপাশি চিংড়িও দেশের বাজারে বিক্রি করছেন। এর ফলে প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো সরবরাহ সংকটে পড়ছে। রফতানিকারকরা চাহিদামতো মাছ সংগ্রহ করতে পারছেন না।

এ সংকট থেকে উত্তরণে ভ্যানামি চিংড়ি চাষে সরকারি উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনা অঞ্চলের রফতানিকারক বিএফএফইএর সাবেক পরিচালক হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ভ্যানামি চিংড়ির উৎপাদন না করা হলে  হিমায়িত মৎস্য খাতকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। সরকার এ চিংড়ির অবস্থা, গুণাগুণ ও পরিবেশগত বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে এ চিংড়ির উৎপাদন শুরু করা হবে কিনা, দেড় বছরেও সে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে আমরা চিংড়ি রফতানিতে পিছিয়ে পড়ছি।

বিএফএফইএর সভাপতি মো. কাজী বেলায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের হিমায়িত মাছের রফতানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। সরকার ভ্যানামি চিংড়ি চাষে সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য গত বছর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরাও এ খাতকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ভ্যানামি চিংড়ি উৎপাদন ছাড়া আমরা এ বাজার ধরতে পারব না। এমনকি এখন থেকে কাজ শুরু করলেও এ মাছের রফতানি বাজার ধরতে হলে আমাদের পাঁচ থেকে ছয় বছর লাগবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন