যুক্তরাষ্ট্রে অপিওয়েড মহামারী-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের দুটি কাউন্টির সঙ্গে একটি মাল্টিমিলিয়ন ডলার চুক্তিতে পৌঁছেছে চার বৃহৎ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। সোমবার কেন্দ্রীয় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থ পরিশোধে সম্মতি দিয়েছে কোম্পানিগুলো। আসক্তি ও মৃত্যুর থেকে মুনাফার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল কোম্পানিগুলো। খবর গার্ডিয়ান, বিবিসি।
বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ
প্রস্তুতকারক তেভা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অন্যতম তিনটি ওষুধ বিতরণকারী কোম্পানি
মোট ২৬ কোটি ডলার পরিশাধ করতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমিউনিটিগুলোর
দায়েরকৃত অপিওয়েড মহামারী-সংক্রান্ত হাজার হাজার মামলার প্রথম নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে এটি।
উল্লেখ্য, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ অপিওয়েড মহামারী চার লাখের বেশি
মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অপিওয়েড মহামারীর জন্য
অপিওয়েড প্রস্তুতকারক, ওষুধ বিতরণকারী ও ফার্মেসি চেইনগুলো দায়ী কিনা এবং দেশটির ২ হাজার ৭০০’র বেশি শহর, কাউন্টি
ও নেটিভ আমেরিকান গোত্রগুলোকে শত শত কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে তাদের দায়বদ্ধতা
প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা সোমবার ওহাইওতে অনুষ্ঠিত বিচারের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
সব পক্ষের মধ্যে যদি কোনো বিস্তৃত
চুক্তি না হয়, তবে আগামী মাসগুলোয় নির্ধারিত অন্যান্য বিচার অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে
শুক্রবার মোট ৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া-সংক্রান্ত একটি আলোচনা ভেস্তে গেছে।
তবে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সোমবারের নিষ্পত্তি হয়তো একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর পথ তৈরি করবে।
র্যাকেটিয়ারিংবিরোধী আইনের আওতায়
ওহাইওর দুটি কাউন্টি চুয়াহোগা ও সামিট অঙ্গরাজ্যটিতে অপিওয়েড মামলা দায়ের করেছে।
সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে মূলত এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। কাউন্টি দুটির দাবি, নেশাজাতীয় (নারকোটিক) ব্যথানাশক
প্রস্তুতকারকরা ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধগুলো কম আসক্তিমূলক ও অধিক কার্যকর দাবি করে
এগুলোর ব্যাপক বিক্রি বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু বাস্তবে তাদের দাবি মিথ্যা ছিল। তাদের এ
মিথ্যা দাবির ফলে এ নেশাজাতীয় ব্যথানাশকগুলোর ব্যবস্থাপত্রে সুপারিশ ও আসক্তি
ব্যাপক বেড়ে যায়।
কাউন্টি দুটি আরো অভিযোগ করে জানিয়েছে, বিতরণকারী
প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসিগুলো এসব ওষুধ সরবরাহ ও বণ্টন সীমিত রাখার যেসব আইনি
বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। এমনকি মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হলেও বিপুল
মুনাফার লোভে তারা এ কাজ বন্ধ করেনি।
সামিট কাউন্টির নির্বাহী আইলিন শাপিরো
বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে এ অঞ্চলে অপিওয়েড ছড়ানো থেকে বিরত রাখা এ মামলার
উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে যা কমিউনিটিগুলোকে
‘বিধ্বস্ত’ করে ফেলেছে এবং হেরোইন ও ফেন্ট্যানিলসহ অন্যান্য বেআইনি অপিওয়েডের
ব্যবহার বাড়িয়েছে।
কাউন্টি দুটি মোট ৭০০ কোটি ডলার
ক্ষতিপূরণের মামলা করেছে। চুয়াহোগা কাউন্টির নির্বাহী আর্মন্ড বুদিশ জানান, এই
অর্থ অপিওয়েড আসক্তদের চিকিৎসা ব্যয়,
জরুরি সেবার ওপর থেকে ওভারডোজের বিশাল ঝামেলা ও
সামাজিক যত্ন প্রদান কিছুটা সহজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে যেসব
কোম্পানি অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়েছে,
তার মধ্যে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক ইসরায়েলি
কোম্পানি তেভা ছাড়াও আরো রয়েছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাককেসন ও
আমেরিসোর্সবার্গেন। উভয় কোম্পানিই যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শীর্ষ উপার্জনকারীর মধ্যে
রয়েছে।