লোকস্থাপত্য, কুঁড়েঘর ও ব্রিটিশের বাংলো

শামীম আমিনুর রহমান

সভ্যতার আদিতেই মানুষ প্রাকৃতিক গুহা থেকে সমতলে এসে বসবাস শুরু করে। পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা সমতলে সে সহজলভ্য উপাদান যেমন গাছের ডাল, পাতা, মাটি, পাথর, কাঠ নানাবিধ এসব উপাদান দিয়ে তৈরি করে নেয় তার আশ্রয়। এটি তৈরিতে তার ওই স্থানে প্রাপ্ত উপাদান ভূমির প্রাকৃতিক স্বরূপ, আবহাওয়ার সঙ্গে টিকে থাকতে সেই ঘরখানিকে দেয় প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ রূপ বা কাঠামোর বিশেষ ধরন। আমাদের এই দেশসহ বিশ্বের সর্বত্রই এমনটি ঘটেছে। মরুভূমির তপ্ত ভূমিতে মোটা মাটির পাথরের দেয়ালে থাকত ছোট ছোট জানালা প্রচণ্ড গরম তপ্ত হাওয়া থেকে বাঁচতে। সে ঘরের রূপ আমাদের দেশের সাধারণ ঘরের মতো নয়। আফ্রিকায় গাছের ডাল ভূমিতে গোল করে পুঁতে তার অগ্রভাগ শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে গোল তাঁবুর মতো আকৃতি দেয়া হয়। সেই কাঠামো ঘিরে দেয়া হয় কাদামাটি দিয়ে। ধরনের গৃহ, যা আজও আফ্রিকান উপজাতিদের মধ্যে প্রচলন রয়েছে। এসবই প্রকৃতপক্ষে লোকস্থাপত্য, যা হাজার হাজার বছর ধরে নির্মিত হয়ে আসছে। লোকস্থাপত্যের পূর্বশর্তই হচ্ছে সহজলভ্য উপাদান, ব্যবহারের উপযোগিতা এবং স্থানীয় কীর্তি-কৌশল তাদের শৈলীর ছাপ। স্থাপত্যরীতিতে প্রধানত তিনটি বিষয় যেমন জলবায়ু, স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপাদান এবং রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রভাব ইত্যাদির ফলে গড়ে ওঠে প্রতিটি অঞ্চল বা দেশে তাদের নিজস্ব লোকজ স্থাপত্যশৈলী। আর আমাদের রয়েছে সেই চিরায়ত নিজস্ব লোকজ স্থাপত্যের উজ্জ্বল উদাহরণ শাশ্বত বাংলার হাজার বছরে গড়ে ওঠা বাংলা কুঁড়েঘর। স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী সহজলভ্য উপাদানে তৈরি এই বাংলার কুঁড়েঘর সারা ভারতবর্ষের জন্য উদিত হয়েছিল গৃহের এক অনুপম অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। গ্রীষ্মমণ্ডলে অবস্থিত বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই আর্দ্র এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বিশেষ করে বর্ষা ঋতুতে বাসোপযোগী ঘরবাড়ি এমনভাবে তৈরি করতে হয়, যাতে ছাদের পানি সহজে গড়িয়ে পড়তে পারে। কারণে ছাদ ঢালু করা হয়। আবহমান বাংলার কুটিরের বর্ণনা দিয়েছেন রমেশ চন্দ্র মজুমদার, ‘বাংলাদেশের বেশীর ভাগ বাঁশের খুঁটি খড়ের চাল দিয়া ঘর তৈয়ারী হইত। দো-চালা চার-চালা সাধারণত ঘরের এই দুই শ্রেণী। দেখা যায় কাঠের ইটের বাড়ীর ছাদ ইহার অনুকরণেই নির্মিত হইত। অর্থাৎ সরল রেখার পরিবর্তে ঘরের চালের ন্যায় কতকটা বাঁকানো হইত। দুইটি বাঁশ অল্পদূরে পুতিয়া তাহার মাথা নোয়াইয়া বাঁধিয়া দিলে যে আকৃতি ধারণ করে, ইটের পাথরের স্তম্ভের উপর গঠিত খিলানগুলিও তাহার অনুকরণ করিত।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং তারা সহজলভ্য সাধারণ উপকরণ মাটি বাঁশ দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে। বাঁশের তৈরি কুঁড়েঘরে বাঁশের চাচ দিয়ে তৈরি করে দেয়াল বা মাটি দিয়েও দেয়াল নির্মিত হয়। ছাদ তৈরি হয় খড় বা ছন দিয়ে। এসব গৃহের ছাদ সাধারণ দোচালা বা চারচালা হয়। চালাঘরের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে চালের বক্রাকার কার্নিশ। চালের সংখ্যা অনুযায়ী দোচালা, চারচালা এমনকি আটচালা হয়েও থাকে। চালাঘর বা বাংলা কুটিরের বর্ণনা প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে অহরহ পাওয়া যায়। দীনেশ চন্দ্র সেনের ভেলুয়া সুন্দরীর কাহিনীতে পাওয়া যায় বাংলা গৃহের

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন