ঢাকার নবাব ছিল ব্রিটিশ বাংলার সবচেয়ে বড় মুসলিম জমিদার পরিবার। সিপাহী বিপ্লবের সময় ব্রিটিশদের প্রতি বিশ্বস্ততার জন্য ব্রিটিশরা এ পরিবারকে নবাব উপাধিতে ভূষিত করে। ব্রিটিশরাজ দ্বারা ভূষিত ঢাকার প্রথম নবাব ছিলেন খাজা আলিমুল্লাহ। মৌলভি খাজা হাফিজুল্লাহ কাশ্মীরি এ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলার জনকল্যাণমুখী স্থাপত্য বিনির্মাণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণে এ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, জীবন ও মান উন্নয়নে নবাব পরিবারের অবদানকে যুগ যুগ ধরে ইতিহাস স্মরণ রাখবে। তাদের জনকল্যাণমুখী স্থাপত্যের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, সমাধি, মন্দির, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা: ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এতিমখানা। নবাব সলিমুল্লাহর একজন প্রিম্যাচিউর কন্যাসন্তান মারা যায়। নবাব ও তার স্ত্রী আসমাতুন্নেসা এতে অনেক মর্মাহত হন। কুর্মিটোলায় ভাড়া করা বাসায় প্রথম তিনি এ কার্যক্রম শুরু করেন। আহসান মঞ্জিলের কাছেই এর নাম দেন ইসলামিয়া এতিমখানা। ম্যানেজিং কমিটি ছিল এর দেখাশোনার জন্য। ১৯১২ সালে নবাবরা এর পরিচালনা খরচের জন্য ২০০ রুপি করে দিতেন। এতিমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি এর স্থান পরিবর্তন করে লালবাগে নিয়ে আসেন।
১৯১৩ সালে লর্ড কারমাইকেল এ এতিমখানা পরিদর্শন করে উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ১০০০ রুপি দান করেন। এ টাকা দিয়ে পরবর্তী সময়ে খাস জমি (আজিমপুর গোর-ই-শহীদ
মসজিদের কাছে) লিজ নিয়ে এতিমদের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণ করেন। দুই বছর সময় লাগে বিল্ডিং তৈরি করতে। এর পুরো খরচ বহন করেন নবাবরা। স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর তার ছেলে ভাড়া বাসা থেকে এই এতিমখানা আজিমপুরে নিয়ে আসেন। এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা।
চৌধুরী ফরিদউদ্দিন সিদ্দিকীর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় এটি তত্কালীন পূর্ব বাংলা তো বটেই, ভারত উপমহাদেশে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এতিমখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এতিমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯১৩ সালে স্যার আহসানউল্লাহ নামে একটি ভবন তৈরি করা হয়, যার খরচ হয় ২২,৮৫৩ টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা দান করেন নবাব হাবিবুল্লাহ। এরপর এ এতিমখানায় মেয়েদের আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়, যেখানে খাজা সালাউদ্দিন ১০ হাজার টাকা দেন। খরচ হয় ২৩ হাজার ১৭৫ টাকা। বাকি টাকা সরকার বহন করে। এর নামকরণ করা হয় আসমাতুন্নেসা ওয়ার্ড। তিনি হলেন নবাব হাবিবুল্লাহর মা। এ সময় এতিমদের সহায়তায় একটি কাপড়ের ফ্যাক্টরিও চালু করা হয়। এতিমখানায় ইসলামী শিক্ষা