কিংবদন্তির ভাওয়াল রাজবাড়ি

ইমরুল কায়েস খসরু

ইতিহাসের সঙ্গে ভাওয়াল রাজপরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেকে গাজীপুরের নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি ভাওয়াল রাজপরিবারের নাম উচ্চারণ করে বসেন। ভাওয়াল রাজপরিবারের স্মৃতিবিজড়িত জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িটি প্রায় ১৫ একর সমতলভূমির ওপর নির্মিত। প্রাসাদটি ঢাকা শহর থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শেষের পাঁচ কিলোমিটার প্রাসাদগামী শাখা রাস্তা ময়মনসিংহ মির্জাপুর সড়কের ছেদরেখা থেকে পূর্বদিকে প্রসারিত। বর্তমানে এই রাজবাড়ি নব্য সৃষ্ট গাজীপুর জেলার সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। ভাওয়ালের জমিদারদের পারিবারিক আবাসস্থল ছিল জয়দেবপুর। ঢাকা জেলার হিন্দু জমিদারদের মধ্যে তারা ছিলেন নেতৃত্বস্থানীয়। জয়দেবপুরের চারদিক টাঙ্গাইল জেলার পূর্ব মধুপুর গড়ের বিস্তৃত গভীর বনভূমির বিখ্যাত গজারি বন দ্বারা পরিবেষ্টিত। এমনকি পঞ্চাশ বছর আগেও এলাকাটি বন্য জন্তুদের অভয়ারণ্য ছিল। এখানে বাঘ, হাতি, বন্য শূকর, হরিণ ইত্যাদি দল বেঁধে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারত।

সবচেয়ে বড় কথা এই রাজবাড়িটি গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল জংশনের একেবারে হাত মেলানো দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ভবন হিসেবে ব্যবহূত এই প্রাসাদটি অত্যন্ত অনিয়মিত অপরিকল্পিত ভূমি নকশায় নির্মিত। ভাওয়াল রাজপ্রাসাদের মূল অক্ষের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ১২০ মিটার। প্রাসাদ চত্বরে প্রবেশের জন্য মূল প্রাসাদ ভবনের প্রায় মিটার পশ্চাতে দক্ষিণ দিকে চার জোড়া গোলায়িত স্তম্ভের ওপর নির্মিত রয়েছে দ্বিতলবিশিষ্ট একটি প্রবেশ দরদালান বা গাড়িবারান্দা। প্রাসাদের গাড়িবারান্দার পশ্চাতে রয়েছে একটি প্রশস্ত বারান্দা। হলঘরের পূর্ব পশ্চিম উভয় দিকে তিনটি করে কক্ষ বিদ্যমান। পরিকল্পনা অনুসারে প্রবেশ হলঘরের ডান দিকে দ্বিতলে ওঠার জন্য রয়েছে কাঠের নির্মিত একটি প্রশস্ত সোপানশ্রেণী। বড়দালান নামে পরিচিত এই সম্মুখ ব্লকটি ইউরোপীয় অতিথিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।

স্থাপত্যটির ইউরোপীয় অতিথিদের জন্য নির্মিত ব্লকের পশ্চাতে রয়েছে ৩০ মিটার বর্গাকৃতির একটি উন্মুক্ত অঙ্গন। অঙ্গনে রয়েছে একটি নাটমণ্ডপ। নাটমণ্ডপের উপরিভাগ লোহা সিমেন্ট-বালি মিশ্রিত মসলা দিয়ে প্রস্তুতকৃত কতকগুলো নলাকৃতির স্তম্ভের ওপর স্থাপিত ঢেউটিনের কুজ্জাকৃতির ছাদে আচ্ছাদিত। অঙ্গনের দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিম দিকে দ্বিতল আবাসিক কক্ষসংবলিত তিনটি ব্লক পরিলক্ষিত হয়। ব্লকসমূহের সম্মুখে অর্ধবৃত্তাকৃতির খিলানসংবলিত টানা বারান্দা বিদ্যমান। অঙ্গনের চতুর্দিকের বারান্দার খিলানসমূহ কতকগুলো করিন্থীয় স্তম্ভের ওপর স্থাপিত।

সর্বোপরি এটি একটি উন্মুক্ত চত্বর, যার দুই প্রান্তে রয়েছে দুটি চৌচালা মন্দির এবং এর পশ্চাতে রয়েছে দ্বিতলবিশিষ্ট একটি সাদাসিধে ইমারত। অধিকন্তু প্রথম অঙ্গনের পশ্চাতে আরো উত্তরে রয়েছে আরেকটি উন্মুক্ত অঙ্গন। অঙ্গনের তিন দিক আবাসিক কক্ষসংবলিত তিনটি দ্বিতলবিশিষ্ট ইমারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। ইমারতগুলোর সম্মুখভাগে গোলায়িত যুগল স্তম্ভের ওপর ছাদ নির্মিত রয়েছে। অঙ্গনের অবশিষ্ট উত্তর দিকে রয়েছে একটি পারিবারিক মন্দির। মন্দিরটির সম্মুখস্থ বারান্দা ছয়টি গোলায়িত স্তম্ভ দ্বারা দুটি সমান সারিতে বিভক্ত। প্রতিটি গোলায়িত স্তম্ভের চারদিক আবার কতকগুলো নলাকৃতির তুশকান স্তম্ভ সংযুক্ত করে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন