আঠারো শতকের
শেষে মোগল শক্তি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন সূচিত হয়। ভারতে ইউরোপীয় শাসন বিস্তারে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে প্রবেশদ্বার। বাণিজ্যিক যোগসূত্র ধরে রাজনৈতিক এবং শেষ পর্যন্ত সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় প্রভাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঔপনিবেশিক শাসন আর্থসামাজিক জীবনে যে কত
গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল, তার প্রতিফলন
সে সময়ে
গড়ে ওঠা এ দেশের
স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট প্রতীয়মান। ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের উদ্ভব ও বিকাশ
আঠারো ও উনিশ
শতক পার
হয়ে বিশ শতকে প্রবলভাবে প্রতিভাত হয়। মোগল-পরবর্তী
স্থাপত্যে ব্রিটিশদের নির্মাণ অবদানের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ভূস্বামী জমিদার শ্রেণীর অবদানও সমভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনামলে গড়ে ওঠা স্থাপত্যে মোগল স্থাপত্য রীতি ও ইউরোপীয়
স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে এক নবরূপ
পরিগ্রহ করে, যা বাংলা
স্থাপত্যে অনন্য স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের গতি-প্রকৃতির
প্রেক্ষাপটে এর যে
বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য
বিধৃত হয়, তার ওপর
আলোকপাত করা হলো।
আঠারো
শতকে ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত
শিল্প প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলার অবস্থা যে ইউরোপের
চেয়ে অগ্রবর্তী ছিল, এ কথা
প্রমাণ করতে বাংলার উন্নত স্থাপত্য শিল্প বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তত্কালে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির
প্রভাব বাংলার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যে সুলতানি আমলে সৃষ্টিধর্মী পরীক্ষা-নিরীক্ষার
মধ্য দিয়ে বাংলা স্থাপত্যের চরম সমৃদ্ধি ঘটে। সুলতানি স্থাপত্যের পটপরিবর্তনে মোগল আমলে উত্তর ভারতকেন্দ্রিক স্থাপত্য প্রভাবে বাংলায় স্থাপত্য রীতিতে ভিন্ন রূপের অবতারণা হয় বটে
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবহমান বাংলা স্থাপত্যের ঐতিহ্য সমাদৃত হতে দেখা যায়।
ঔপনিবেশিক
আমলে নির্মিত স্থাপত্যে উল্লেখযোগ্য ইমারত গ্রিক স্মৃতিসৌধ (ছাত্র-শিক্ষক
কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়),
কার্জন হল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়),
বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম (রাজশাহী), কারমাইকেল
কলেজ (রংপুর) শীতলাই
হাউজ, তাড়াশ রাজবাড়ি
(পাবনা) ইত্যাদি। ইউরোপীয়
নীল ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আঠারো শতকের শেষ ভাগে বাংলায় যেসব নীলকুঠি গড়ে ওঠে, সেগুলোর মধ্যে
রাজশাহী, যশোর, পাবনা
ইত্যাদি স্থানের নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ উল্লেখযোগ্য। ঔপনিবেশিক আমলে বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদারদের দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ, জমিদার বাড়ি
ও অন্যান্য
অট্টালিকার মধ্যে রয়েছে আহসান মঞ্জিল (ঢাকা), বালিয়াটি
প্রাসাদ (মানিকগঞ্জ), বলিহার