কুমারখালীর নীলকুঠি ও আবাসিক ভবন

ড. মো. আতিয়ার রহমান

আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত জমিদারদের নির্মিত বিশেষ করে প্রাসাদতুল্য বাসভবন জরাজীর্ণ নীলকুঠিগুলো কুষ্টিয়া জেলাসহ সমগ্র বাংলার নীল চাষ নীল বিদ্রোহের একমাত্র বিদ্যমান নিদর্শন। আঠারো শতকের শেষভাগে (১৭৭৪ খ্রি.) উনিশ শতকের প্রথমার্ধজুড়ে প্রায় পৌনে ১০০ বছরজুড়ে বাংলায় ব্যাপক নীল চাষ হয়। কিন্তু নীলকরদের শোষণ-অত্যাচারে অতিষ্ঠ কৃষকদের বিদ্রোহ জার্মানিতে কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের ফলে নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলার সর্বাধিক নীল উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর অন্যতম ছিল কুষ্টিয়া জেলা। অঞ্চলের তিন-চারটি গ্রামকে একেকটি নীলকুঠির অধীনে এনে অগণিত নীলকুঠি স্থাপন করা হয়। অনেক কুঠি এখনো সমকালীন বাংলার নীল চাষ নীল বিদ্রোহের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানেও এখন কিছু নীলকুঠির অস্তিত্ব রয়েছে।

এগুলোর কয়েকটি এখনো বিভিন্ন কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। বাকিগুলো পরিত্যক্ত থেকে জীর্ণদশাগ্রস্ত ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমাদের আর্থসামাজিক ইতিহাসে কুঠি নিদর্শনগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কুষ্টিয়া জেলার বিদ্যমান নীলকুঠিগুলোর মধ্যে আমঝুপি কুঠি বিখ্যাত। বর্তমানে এটি সরকারি রেস্ট হাউজহিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। এছাড়া কুমারখালী কুঠি, ঘোলদাড়ি কুঠির নাম উল্লেখযোগ্য।

আবাসিক ভবন, প্রাসাদ, মন্দির আমাদের স্থাপত্য শিল্পকে এক নতুন ধারায় উন্নীত করে। উপর্যুক্ত আলোচনায় মন্দির সম্পর্কে আলোচিত হওয়ায় এখন বাসভবন সম্পর্কিত দু-একটি উদাহরণ পেশ করা হলো। ­েল্লখ করা যেতে পারে, এরূপ স্থাপত্যের বেশির ভাগ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর পরিত্যক্ত হওয়ায় সংরক্ষণের অভাবে দখলকারীদের দৌরাত্মে এসব ইমারতের সংখ্যা একেবারে সীমিত হয়ে এসেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে কুষ্টিয়া জেলায় বেশ কয়টি জরাজীর্ণ জমিদারি প্রাসাদের সন্ধান মিলেছে। নিম্নে জমিদারি প্রাসাদ নীলকুঠি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

ইউরোপের শিল্প বিল্পবের পর বস্ত্র শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে নীলের ব্যবহার বাড়তে থাকে। নীল চাষ ক্রমে একটি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়। ইউরোপের দেশগুলো ক্রমে তার উপনিবেশগুলোতে নীল চাষ প্রসারিত করে। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার উপনিবেশ হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে বাংলার প্লাবন সমভূমির দিকে দৃষ্টি দেয় ব্রিটিশরা। ১৮১৫ সালের দিকে বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশের নানা স্থানে নীল চাষ বিস্তার লাভ করে। এসবল স্থানে ধীরে ধীরে অসংখ্য নীলকুঠি গড়ে উঠতে দেখা যায়। নীলকুঠিগুলো একদিকে যেমন ইংরেজ শোষণ বর্বরতার স্মারক, তেমনি বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।

কুষ্টিয়া জেলায় শতাধিক নীলকুঠির অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে এগুলোর বেশির ভাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে শালঘর মধুয়া, সিন্দুরিয়া, কাপাসডাঙ্গা, কানাইনগর, ফুলবাড়ি, বিত্তিপাড়া, বেদবাড়িয়া, নিশ্চিন্তপুর, আমবাড়িয়া রতনপুর, গোসাইনগর, ভাটপাড়া, নতিডাঙ্গা, আমলা, শিমুলিয়া, জয়রামপুর, আলমডাঙ্গা, জীবননগর, দামুড়হুদা, আল­ারদর্গা, মহিষকুণ্ডি, পোড়াদহ প্রভৃতির নাম উল্লেখ করা যায়।

পলাশীর যুদ্ধের ৫০ বছরের মধ্যে ইংরেজরা বাংলার জমি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন