জমিদারি আমলে প্রাসাদ-স্থাপত্য প্রকৃতি

ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান

বাংলার রাজনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় দেশের জমিদারশ্রেণী যে বিশেষ ভূমিকা পালন করত। বিশেষ করে মুসলিম ইংরেজ শাসনামলে তারা ছিলেন সাধারণ প্রজা সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধস্বরূপ সরকারি মুখপাত্র। রাজস্ব আদায়ের সাথে সাথে স্বীয় জমিদারি এলাকার উন্নয়ন বিভিন্ন জনহিতকর কার্যাদি সম্পাদন করাও তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অত্যন্ত প্রতাপশালী এসব জমিদার স্বীয় জমিদারি এলাকায় আধিপত্য অক্ষুণ্ন রাখাসহ সাধারণ প্রজাদের চোখে নিজেদের শৌর্য-বীর্য ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য ঊর্ধ্বতন শাসকদের অনুকরণে নির্মাণ করতেন জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল প্রাসাদ এবং প্রাসাদের সাথে বিভিন্ন অফিস, কাছারি, খাজাঞ্চিখানা, অতিথিশালা বিভিন্ন ধর্মীয় ইমারত। তাদের নির্মিত এসব ইমারতে শিল্পকলার প্রতি তাদের গভীর অনুরাগের পরিচয় মেলে। কেন্দ্রীয় শাসকদের মতো বাংলার জমিদারদের নির্মিত ইমারতগুলোও দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা. ধর্মীয় স্থাপত্য . লৌকিক বা লোকায়ত স্থাপত্য। ধর্মীয় স্থাপত্য হলো সেসব ইমারত, যেগুলো বিভিন্নভাবে মানুষের ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন মন্দির, মঠ, মসজিদ, সমাধিসৌধ, মাদ্রাসা, ইবাদতখানা, ঈদগাহ ইত্যাদি। অন্যদিকে লৌকিক স্থাপত্য হলো সেসব ইমারত, যেগুলো মানুষের পার্থিব কাজে অর্থাৎ বসবাস বা অন্য কোনো কর্মসম্পাদনের জন্য ব্যবহূত হয়। যেমন প্রাসাদ, অফিস-আদালত ভবন, দুর্গ, সরাইখানা, হাম্মামখানা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, থিয়েটার হল, সেতু ইত্যাদি।

বিশ্বের সব ধর্মাবলম্বীই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন পারলৌকিক শান্তি লাভের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণে এবং এর সৌন্দর্যবর্ধনে যে শ্রম অর্থ ব্যয় করেছে, লৌকিক স্থাপত্য নির্মাণে ঠিক ততটা করেনি। ধর্মীয় ইমারতগুলোকে কালজয়ী করে রাখার জন্য এগুলো নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপাদান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তর কিংবা যেখানে প্রস্তরের স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে পোড়ানো ইট ব্যবহূত হয়েছে। ফলে এর স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মানুষের মনে ধর্মীয় অনুভূতি সদাজাগ্রত থাকার কারণে স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে ধর্মীয় স্থাপত্যই অধিক গুরুত্ব লাভ করেছে। কথা সামগ্রিকভাবে বিশ্ব শিল্পকলার ইতিহাসে যেমন প্রযোজ্য, তেমনি বাংলার জমিদারদের নির্মিত স্থাপত্যকর্মের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে, বিশেষ করে বাংলার নবাবি আমলে (১৭০০-৫৭) গড়ে ওঠা দেশের জমিদারশ্রেণীর অধিকাংশই ছিল হিন্দু। ফলে ১২০৩- খ্রিস্টাব্দে হিন্দু রাজত্ব অবসানের পর কেন্দ্রীয় মুসলিম শাসকদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলার হিন্দু ধর্মীয় স্থাপত্য অর্থাৎ মন্দির স্থাপত্যের নির্মাণধারা যখন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল, তখন দেশের হিন্দু জমিদারদের ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতায় তা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্বীয় উদ্যোগে হিন্দু জমিদাররা নব উৎকর্ষে বিকশিত বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের সাথে সংগতি রেখে দেশের মন্দির স্থাপত্যের চরম বিকাশ ঘটায় এবং ইংরেজ শাসনের অবসান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে সময় জমিদারদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় স্বীয় জমিদারবাড়ি তার আশপাশে বহু মন্দির নির্মিত হয়। আকৃতি অনুসারে মন্দিরগুলো প্রধানত রেখ দেউল, চালা মন্দির (একচালা বা একবাংলা, দোচালা, চৌচালা, আটচালা, জোড়বাংলা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন