উনিশ শতকের সংকর নির্মাণশৈলী

ড. পারভীন হাসান

আঠারো শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত গির্জা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রয়োজনে নির্মিত ইমারত শ্রেণীর স্থাপত্যের অন্তর্ভুক্ত। ১৬৯০ সালে জব চার্নক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাকেন্দ্র কলকাতা ভারতে ব্রিটিশ শক্তির অবস্থানস্থায়িত্বের ক্রমঃপরিবর্তনশীলতার ফলে সহসা একটি রাজকীয় নগরীতে রূপান্তরিত হয়। কোনো সুস্পষ্ট রাজকীয় স্থাপত্যশৈলী ভারতে কখনো বিকশিত হয়নি বটে, তবে পুরো ব্রিটিশ শাসনামল এক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে কেটে যায়। আঠারো শতকের প্রথম ভাগেই কলকাতায় ছিল একটি দুর্গ, গির্জা, আদালত ভবন উদ্যানশোভিত ঘরবাড়ি। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাস্থ্যগতউভয় কারণে তখন পর্যন্ত নির্মাণ কর্মকাণ্ড নদীতীরেই সীমিত থাকে। ১৭৭৩ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় দেওয়ানি স্থানান্তরের পর থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কলকাতা ভারতের রাজধানী হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকে। ২০ লাখ পাউন্ড অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। এর সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ময়দানের চতুর্দিকে সুপরিকল্পিতভাবে সরকারি ভবনগুলো স্থান পায়। ফলে দুর্গের চতুর্দিকের বিস্তীর্ণ ময়দান এলাকা দুর্গ থেকে নির্বিঘ্নে কামান দাগানোর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার সুযোগ দিত। কলকাতা নগরী অচিরেই সম্প্রসারিত হতে থাকে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নিজেদের বিত্তবৈভবের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে জমকালো সব ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এগুলোর জুতসই তুলনা চলত শুধু ইংল্যান্ডের পল্লীভবন সমকালীন পালাডিয়ান বিশাল বাসভবনগুলোর সঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে সূচিত হলো ভারতীয় পরিবেশে ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতি প্রবর্তনের প্রথম পর্যায়। এগুলোর অধিকাংশই ছিল উদ্যানপরিবেষ্টিত ইষ্টকনির্মিত দ্বিতল বা ত্রিতল ভবন, যার অন্তঃস্থিত কক্ষগুলো প্রশস্ত বারান্দা দ্বারা সুরক্ষিত। হেস্টিংসের ভবনটি নির্মিত হয় ১৭৭৭ সালে আলীপুরের দক্ষিণ উপকণ্ঠে। গোড়ার দিকে এটি ছিল একটি সাধারণ সাদা রঙের দ্বিতল ঘন ক্ষেত্রবিশিষ্ট ইমারত, যার নিচতলায় ছিল বসবাসের ঘরগুলো। বড় লাট হেস্টিংস এগুলো এতই পছন্দ করেছিলেন যে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তার ডেইলসফোর্ডের বাড়ির উদ্যান বানিয়ে নিয়েছিলেন আলীপুরের উদ্যানেরই আদলে। এর কাছাকাছি রয়েছে বেলভেডেয়ার, যার মধ্যাংশ হচ্ছে আদি অকৃত্রিম। বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগাররূপে ব্যবহূত ভবন এক সময়ে বাংলার ছোট লাটদের এবং পরবর্তী সময়ে দিল্লি থেকে আগত পরিদর্শক ভাইসরয়দের বাসভবন হিসেবে ব্যবহূত হতো। উভয় ভবনই পরে সম্প্রসারণ করা হয়। ১৭৮০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেরানিদের কার্যালয় হিসেবে কলকাতার মুখ্য মুক্তাঙ্গনের উত্তর দিকে নির্মিত হয় একটি বিরাট অট্টালিকা। সমকালীন নকশাচিত্রে এটিকে একটি সুদীর্ঘ সাদামাটা সেনাছাউনি সদৃশ অট্টালিকারূপে লক্ষ করা যায়। এর জানালাগুলো সবই একই ধরনের এবং আয়োনীয় স্তম্ভ ক্ষুদ্র স্তম্ভ সারির প্যারাপেট (ছাদের কিনারা) বিশিষ্ট উদ্গত মধ্যমাংশ দিয়ে এর ফাসাদে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এটিকে রাইটার্স বিল্ডিংবলে অভিহিত করা হয়। কারণ কোম্পানির চাকরিতে নবনিযুক্ত কেরানিদের প্রশিক্ষণের জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ অংশটি ব্যবহার করে। বেঙ্গল সচিবালয় হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ১৮৮০ সালে আয়োনীয় ফাসাদ পেডিমেন্ট যুক্ত করে ভবনের সম্মুখভাগ নতুন করে নির্মিত হয়। সন্ত জনের গির্জা নির্মিত হয় ১৭৮৭ সালে এবং পরবর্তী শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এটি ক্যাথিড্রাল গির্জার মর্যাদায় সমাসীন থাকে। এটা

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন