সেচ ও সার ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা ড্রিপ ইরিগেশন

আবদুল কাদের, যশোর

যশোর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকা ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। ফুলের পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ভিত্তিতে সবজির চাষাবাদ হয়। কয়েক বছর আগেও সবজি ও ফুল আবাদে সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো এখানকার চাষীদের। তবে সেদিন এখন আর নেই। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নেয়া ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি এ এলাকার সেচ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, সবজি ও ফুল চাষে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

ড্রিপ ইরিগেশন হলো নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থা। এর সঙ্গে ফার্টিগেশন সেচ প্রযুক্তি মিলিয়ে কৃষকরা পানির পাশাপাশি সারের ব্যবহার আরো কার্যকর ও সাশ্রয় করতে পারেন।

ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে পানিতে দ্রবণীয় সার যেমন ইউরিয়া, পটাশ ইত্যাদি পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফসলে প্রয়োগ করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এতে ৩৫-৪০ শতাংশ পটাশ এবং ৫০-৫৫ শতাংশ ইউরিয়া ও প্রায় ৫০ শতাংশ সেচের পানি সাশ্রয় হয়। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দারুণ ফল পাওয়া গেছে।

এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পানি প্রতি দুদিন পর পর প্রয়োগ করতে হয়। ভূ-উপরিস্থ পানির বাষ্পায়ন রোধে ধানের খড় মালচ হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো হয়। ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০-৪০ টন গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ৩০-৩২ শতাংশ বেশি।


খরাপীড়িত ও সেচ সংকট এলাকা, লবণাক্ত অঞ্চল এবং পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে সেচের পানির অভাব, সেখানে ড্রিপ খুবই উপযোগী সেচ পদ্ধতি। এ উন্নত সেচ প্রযুক্তির যাবতীয় উপকরণ স্থানীয়ভাবে তৈরি করা যায়।

দীর্ঘদিনের ফুলচাষী গদখালীর পানিসারা গ্রামের কৃষক শাহজাহান সরদার ড্রিপ ইরিগেশনের সুফল সম্পর্কে জানান, গ্রামের ১৫০ জন কৃষক ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচির আওতায় সবজি ও ফুলের আবাদ করছেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেটি সেচে ব্যবহার করছেন তারা। এতে ভালো ফলন পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি সেচ) যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচি হাতে নেয়। এর মাধ্যমে ঝিকরগাছার গদখালীতে আটটি সোলার পাম্প, আটটি গভীর সেচ পাম্প ও ছয়টি পলিহাউজ নির্মাণ করা হয়। এর মাধ্যমে ১৫০ জন কৃষকের ৩৬০ বিঘা জমি ফুল ও সবজি চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

এ ব্যাপারে বিএডিসি (সেচ) যশোর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা জানান, ড্রিপ ইরিগেশন একটি আধুনিক সেচ পদ্ধতি। ডাগওয়ালের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সে পানি চাষীরা বারো মাস ব্যবহার করছেন। আগে এক বিঘা জমিতে দুজন শ্রমিকের পানি দিতে সময় লাগত ৩ ঘণ্টা। এখন এ পদ্ধতিতে মাত্র ১০ মিনিটে শ্রমিক ছাড়াই ক্ষেতে পরিমিত পানি দেয়া যাচ্ছে।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন