ব্যাংকের কেলেঙ্কারি মানুষের আহাজারি

বণিক বার্তা ডেস্ক

আর্থিক কেলেঙ্কারিতে থমকে আছে ভারতের পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ (পিএমসি) ব্যাংকের প্রায় সব কার্যক্রম। ব্যাংকটির আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম এসেছে বড় বড় রাঘববোয়ালের। জালিয়াতিতে অভিযুক্তদের তালিকায় তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী, একাধিক মন্ত্রী, রাজনীতিক সরকারি কর্মকর্তারাসহ ওই ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রয়েছে। কেলেঙ্কারির ঘটনায় মহারাষ্ট্রে সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারসহ মোট ৭১ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে মুম্বাই পুলিশ। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ওয়ারিয়াম সিংহসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে মুম্বাই পুলিশ।

ব্যাংকটির আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ব্যক্তিরা কী শাস্তি পাবেন, তা এখনো অনেক দূরের বিষয়। কিন্তু কোনো কেলেঙ্কারি বা দুর্নীতিতে যুক্ত না থেকেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পিএমসির সাধারণ গ্রাহকরা। হাজার ৩৫৫ কোটি রুপির কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর তহবিল ঠিক রাখতে প্রায় এক মাস আগে ব্যাংকটি থেকে অর্থ তোলার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ফলে গ্রাহকরা ছয় মাসে ৪০ হাজার রুপির বেশি তুলতে পারবেন না। পিএমসি কাণ্ডে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন গ্রাহকরা, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের পর তা তীব্র ক্ষোভে রূপান্তরিত হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির গ্রাহকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। রিজার্ভ ব্যাংক হয়তো নিজের অবস্থান থেকে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তির সমাধান দেবে কে?

ব্যাংকটির গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় আর্থিক জালিয়াতির কথা কেন অডিটে ধরা পড়ল না? অনেকে বলেছেন, নিজেদের দোষে প্রতারণা আটকাতে না পারার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন গ্রাহকের অর্থ আটকে দিয়ে বিপাকে ফেলছে তাদের। এতদিন পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান করতে না পারায় দিল্লির সরকারকেও দুষছেন অনেক গ্রাহক।

পিএমসির গ্রাহকদের অভিযোগ, কেলেঙ্কারি সামনে আসা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পর তাদের দুর্দশা শুধুই বেড়েছে। ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে না পেরে অনেকেই সন্তানদের স্কুলের ফি দিতে পারছেন না। অনেকেরই চিকিৎসা আটকে গেছে। অর্থ তুলতে না পেরে কারো আবার সংসারের খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই ব্যাংকে যাদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে, তাদের অনেকেরই মনে আশঙ্কা জমেছে, সারা জীবন ধরে জমানো অর্থ হয়তো হারাতে হবে।

ব্যাংকটি থেকে অর্থ তুলতে না পেরে এখন পর্যন্ত চারজন আমানতকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার মুম্বাইয়ের মালাডে মারা যান ৮৩ বছর বয়সী মুরলীধর ধারার। তার পরিবারের বক্তব্য, হূদযন্ত্রের অসুখে ভোগা মুরলীধরের একটি জটিল অপারেশনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পিএমসি ব্যাংকে ৮০ লাখ রুপি জমা থাকলেও তোলা যায়নি। অর্থ তোলার জন্য পরিবারটি আবেদনও করেছিল, কিন্তু অনুমোদন পায়নি।

৪০ বছর বয়সী রবীন্দ্র কুমার ঝা দুই সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে পারছেন না। সংসার খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসার পর থেকে দুশ্চিন্তা অবসাদে ভুগছেন তিনি। ব্যবসায়ী এমএ চৌধুরী বলছেন, কর্মীদের বেতন কর দিতে পারছেন না, বাকি পড়ছে বিদ্যুৎ বিলও। কারণ পিএমসি ব্যাংকের চেক জমা দিলেও তা ফেরত আসছে।

অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী টেক চাঁদ বলছেন, পিএমসি ব্যাংকে ১৮ লাখের বেশি রুপি জমা রয়েছে, অথচ স্ত্রীর ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না। কেননা প্রতি মাসে ব্যাংকটি থেকে যে ১০ হাজার রুপি সুদ পেতেন, তা আটকে গেছে।

পিএমসির গ্রাহকদের এমন দুর্দশার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সবার অপেক্ষা কবে হবে সমাধান।

সূত্র: এনডিটিভি, লাইভমিন্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন