দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠনটির সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বৈঠকে যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যুবলীগ চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, তা হয়নি। তবে চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের সবাইকে অব্যাহতি দিতে নেত্রীর নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে গণভবনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। যেমন আগে যুবলীগ করার কোনো বয়সসীমা ছিল না। গতকালের বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ বছর করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবে।
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন কে এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সব করবে।
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যার মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়াও রয়েছেন।
এছাড়া ব্যাংক হিসাব তলব
করা হয়েছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী শাওনের। যুবলীগ চেয়ারম্যানের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি ওই সময় অতীতে তাদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। অবশ্য পরে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তাকেই বহিষ্কার করা হবে। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। যদিও ৭ অক্টোবর রাতেও তিনি গণভবনে গিয়েছিলেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ব্যাংক হিসাব তলব ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার পর থেকে প্রকাশ্যে আসছেন না তিনি।
কিছুদিন আগেও যিনি ছিলেন যুবলীগের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তার বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে কথা বলেন। সে সময় কয়েকজন নেতা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করারও কথা বলেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই বয়োজ্যেষ্ঠদের নেতৃত্বে চলছে যুবলীগ। সংগঠনটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়স ষাটোর্ধ্ব। যুবলীগের ১৪৯ সদস্যের কমিটির শতাধিক নেতাই পার করেছেন বয়সের অর্ধশতক। আবার এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জন রয়েছেন, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি।
শুরুতে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৪০ বছর। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ম তুলে দেয়া হয়। এখন যেকোনো বয়সীরাই এ সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে পারেন। সংগঠনটির ইতিহাস বলছে, ১৯৭৪ সালে প্রথম যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেই কংগ্রেসে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটির এ পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আমির হোসেন আমু।
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৭ ব?