সুনামগঞ্জে অতিরিক্ত মাটি ভরাটে বন্ধ বিদ্যালয়ের পাঠদান

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ

নদী খননের বালিতে ভরাট হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। বারান্দায় এক ফুট পরিমাণ বালি জমে যাওয়ায় দরজা খুলছে না। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পাঠদান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলার বৌলাই নদী খননের কাজ করছে ঢাকার ওটিবিএল ড্রেজিং কোম্পানি। বিআইডব্লিউটিএর কাজটি তত্ত্বাবধান করছে উপজেলা প্রশাসন। স্কুলে মাটি ভরাটের কথা ছিল। তবে ভরাট হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের অনুরোধ উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত বালি ফেলেছে ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিতরা। এতে গত শনিবার রাতের মধ্যে পুরো বিদ্যালয় এলাকা কয়েক ফুট বালির নিচে চাপা পড়েছে।

গতকাল দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের চিকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ আশপাশ বালিতে ঢাকা পড়েছে। একমাত্র টিউবওয়েলটির ওপর দু-তিন ফুট পুরু বালি। বারান্দায় বালি জমে যাওয়ায় দরজা খোলা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর নির্ধারিত শ্রেণীকক্ষগুলো বন্ধ। শুধু দ্বিতল ভবনটির উপরের তলার একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। বাকি একটি কক্ষ দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন জানান, শ্রেণীকক্ষ খুলতে না পারায় শিক্ষার্থীরা এসে ফিরে গেছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করেন, বৌলাই নদী খননে নিয়োজিত ওটিবিএল ড্রেজিং কোম্পানির প্রতিনিধি রাজু আহমেদ সোহেলকে শনিবার রাতেই ফোন করা হয়েছিল। তাদের বলা হয়, যেভাবে বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ফেলা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা ভরাট হয়ে যাবে। কিন্তু তারা শোনেননি। এখন বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের নিচের তলার তিনটি ক্লাসরুমের দরজা আটকে গেছে।

চিকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী প্রজ্ঞা তালুকদার জানায়, স্কুলের দরজা মাটিতে চাপা পড়েছে। দরজা খুলতে না পারায় স্যার আমাদের ছুটি দিয়েছেন।

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শুভ সরকার জানায়, পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা চলছে। কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাসের দরজায় মাটি রুমের ভেতরে পানি থাকায় ক্লাসে বসা যাচ্ছে না। তাই দ্বিতীয় তলায় এক রুমে সবাই পরীক্ষা দিচ্ছি।

এদিকে বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলটি মাটিচাপা পড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রাও। চিকসা গ্রামের বাবুল চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের একটি টিউবওয়েল ছিল, সেটাও নদী খননের মাটিতে ভরে গেছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ আশপাশের বাড়িগুলো এখন খাওয়ার পানির ভোগান্তিতে আছে।

ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাহাদাত হোসেন বলেন, শনিবার বিকাল থেকে ভরাটের কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি, যে পরিমাণ মাটি ফেলার কথা সেটি হয়ে গেছে। তখন ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে ড্রেজিং কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারের কাছে গিয়ে বালি ফেলা বন্ধ করতে বলি কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমি রাতে ওটিবিএলের প্রতিনিধি রাজু আহমদকে ফোন দিই, তিনি বলেন ঢাকায় আছেন। সকালে উঠে দেখি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাসরুমের দরজায় মাটির চাপে বন্ধ হয়ে গেছে।

ওটিবিএলের প্রতিনিধি রাজু আহমদের সেলফোন নম্বরে কল করলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছুটিতে আছি। এসে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি দেখব।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

নদী খননের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির হাসানের কাছে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সোমবার (আজ) সরেজমিনে গিয়ে দেখব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন