ইরানে পুরনো মৌসুমের চিনি রফতানি করছে ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

চিনির অতিরিক্ত মজুদ নিয়ে বিপাকে রয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক বাজারেও চলছে মন্দা। পরিস্থিতিতে রফতানি বাড়াতে ভর্তুকি দিতে শুরু করেছে সরকার। এশিয়া আফ্রিকার বাজারে কম দামে চিনি বিক্রির কারণে অন্য রফতানিকারক দেশগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তিও আসছে। এর মধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ইরানে চিনি রফতানি শুরু করেছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে মিল মালিকরা মজুদ বেচে আগামী মৌসুমে নতুন আখ কিনতে অর্থ জোগাড় করতে তত্পর হয়ে উঠেছেন। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ইরান। অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে মরিয়া দেশটি। ভারতও নতুন মৌসুমের জন্য চিনির গুদাম খালি করতে খুঁজছে ক্রেতা। তবে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক দেশটির রফতানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আরো পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কৃষকদের বাঁচাতে অভ্যন্তরীণ নিম্নমুখী বাজার ভারতকে সামলাতেই হবে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের ট্রেডিং হাউজগুলো এরই মধ্যে ইরানে লাখ ৫০ হাজার টন চিনি রফতানির চুক্তি করেছে। এসব পণ্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জাহাজীকরণ হবে। ফ্রি-অন-বোর্ড ভিত্তিতে (জাহাজ ভাড়ার দায় ক্রেতার) প্রতি টন ৩০২ ডলার বা ২১ হাজার ৬০০ রুপি দরে ইরানের কাছে চিনি বিক্রি করছে ভারত।

পাশাপাশি শ্রীলংকা, আফগানিস্তান আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে আরো লাখ ৫০ হাজার টন চিনি বিক্রির চুক্তি হয়েছে। প্রতি টন ৩১৫ ডলার দরে বিক্রীত চিনি চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে জাহাজীকরণ হবে।

যেখানে গত বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে ডিসেম্বরে জাহাজীকরণের জন্য টনপ্রতি ৩৪৭ দশমিক ৬০ ডলারে চিনি বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ ভারত বেশ সস্তায় চিনি রফতানি করছে।

ভারতের পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মির কমোডিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহিল শেখ বলেন, বছর উত্তর প্রদেশের চিনিকল মালিকদের তত্পরতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা ইরানে ভারতীয় রুপির বিনিময়ে চিনি বিক্রি করছেন।

মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে ইরান বিশ্ব বাণিজ্যে ব্রাত্য। দেশটি জ্বালানি তেল বাণিজ্যের লেনদেন মার্কিন ডলারে করতে পারবে না। সম্প্রতি ইরান রুপির বিনিময়ে ভারতে তেল রফতানিতে রাজি হয়েছে। অর্থ শুধু ভারতীয় পণ্য কিনতেই ব্যবহার করতে পারবে।

ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়। চিনির বৃহত্তম উৎপাদক রাজ্যটির মিল মালিকরা সাধারণত খুব বেশি রফতানি করেন না, কারণ পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত চিনি বহন করে নিয়ে যেতে বেশি খরচ পড়ে।

রাহিল বলেন, উত্তর প্রদেশের মিল মালিকরা এখন নতুন মৌসুমের চিনির জন্য গুদাম খালি করছেন। চিনি বিক্রি না হওয়ায় তাদের প্রচুর টাকা গুদামে আটকা আছে। চিনি বিক্রির টাকা দিয়েই তারা আবার কৃষকদের কাছ থেকে আখ কিনবেন।

তবে মুম্বাইভিত্তিক রফতানিকারকরা বলছেন, ইরান আমাদের উদ্বৃত্ত সব চিনি কিনতে পারবে না। কারণে এশিয়া আফ্রিকায় আরো বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজন আছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এটা খুব কঠিন হবে।

৬০ লাখ টন চিনি রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করে টনপ্রতি ১০ হাজার ৪৪৮ রুপি ভর্তুকি ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। ২০১৯-২০ বিপণন মৌসুমের জন্য ভর্তুক্তি সুবিধা অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে যেভাবে চিনির দাম পড়ছে, তাতে ৪০ মিলিয়ন টনের বেশি রফতানি সম্ভব হবে না।

এদিকে সরকারি হিসাবে ভারতের নতুন বিপণন বছর শুরু হবে কোটি ৪২ টন চিনির মজুদ নিয়েই। আগামী মাস থেকে আখের মাড়াই শুরু হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন