ব্রেক্সিট যদি কোনো টিভি সিরিজ হতো, তবে এটি যে অপ্রত্যাশিত ‘টুইস্ট-টার্ন’ ও রাজনৈতিক ‘সন্ধিক্ষণ’ দেখিয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোয় নিশ্চিতভাবে বিপুল সংখ্যক পুরস্কার বগলদাবা করত। আর এ সিরিজের মূল চরিত্রে থাকা ‘কমেডিয়ান’ বরিস জনসন পেতেন বিশেষ প্রশংসা। ‘দর্শনীয় মঞ্চ’ হাউজ অব কমন্সে গত শনিবার ‘ব্রেক্সিটের’ যে বিশেষ এপিসোড সম্প্রচার হলো, তা পেত রেকর্ড রেটিংস।
কিন্তু ব্রিটেন ও ইইউর জন্য সমস্যা হলো, ব্রেক্সিট কোনো টিভি সিরিজ নয় এবং বাস্তব জীবনে এমন কোনো রিমোট কন্ট্রোল নেই, যার মাধ্যমে চ্যানেল পরিবর্তন করা যায়। এ ‘শো’ যত বেশি দিন চলবে, ততই এটি দেখা আরো বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠবে। ইইউর সঙ্গে নিজের করা ‘বিচ্ছেদ’ চুক্তি শনিবার পাস করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা উদ্যোগটি বাতিল করে দেন।
শনিবার চুক্তিটি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কেননা ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা সন্দেহ করছেন ৩১ অক্টোবরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ার যাওয়ার জন্য বরিস জনসন ‘গোপন’ কোনো উপায় খুঁজছেন। এমপিরা চাচ্ছেন, চুক্তির জন্য ভোট দেয়ার আগে ইইউ থেকে বেরিয়া যাওয়ার সব ধরনের শর্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে নির্দিষ্ট সময়ই ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা এখন প্রায় অসম্ভব ঠেকছে।
এর অর্থ ‘ব্রেক্সিট শো’র সময় বাড়ল আরো এক সিজন এবং হাউজ অব কমন্সের দাবি পূরণের জন্য আলোচনা চলবে। এরই মধ্যে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া আরো বিলম্বিত করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাক্ষরবিহীন একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ফ্রান্স কিছুটা গাঁইগুঁই করলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিশ্চিতভাবে আবারো সময় বাড়াবে।
স্বাভাবিকভাবেই লন্ডন সময় বাড়ানোর জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ব্যাখ্যা দেবে। কিন্তু এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ‘চুক্তিহীন
ব্রেক্সিটের’ দায় এড়ানোর জন্য ইইউ সবকিছু করবে। আর যদি ‘চুক্তিহীন ব্রেক্সিট’ করতেই হয়, তবে ইইউ এর দায় চাপাবে ব্রিটেনের ওপর।
এটা বোঝা সহজ সময় বাড়ানোর চিঠি দিতে বরিস জনসনকে কতটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে হয়েছে, কেননা ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরের চূড়ান্ত সীমা পেছানোর জন্য ‘মরে গেলও’ তিনি কোনো অনুরোধ করতে পারবেন না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন জনসন।
কিন্তু গত মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধীদের পাস করা একটি আইন অনুযায়ী ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি (২০২০) পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে ইইউর কাছে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে ব্রাসেলসের কাছে বরিস গ্রহণযোগ্যতা হারালেন বলে মনে হচ্ছে। কেননা গত বৃহস্পতিবার তিনি বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন, তার চুক্তিটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করবে। কত কিছু আশা করেছিলেন তিনি!
সময় বাড়ানোর অনুরোধ পর্যালোচনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের তাড়াহুড়া করার কোনো প্রয়োজন নেই। কয়েক দিনের মধ্যে ইইউর নেতৃত্ব পর্যায়ের বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমনকি ৩১ অক্টোবর মধ্যরাতের কয়েক ঘণ্টা আগেই সিদ্ধান্ত জানালেও চলবে। এও ঠিক যে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিসের চুক্তিটি পাস হলেও সেটিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও পাস হতে হতো।
যারা এ অতিনাটকীয় ‘ব্রেক্সিট’ সিরিজ দেখতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের কাছে এরই মধ্যে এটি ‘বিনোদন মান’ হারিয়ে ফেলেছে। গত শনিবার কয়েক হাজার লোক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি— হয় ইইউর অংশ হিসেবে থেকে যাও, নইলে আবার গণভোটের আয়োজন করো। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভেতরে থাকা রাজনীতিবিদদের এ কথাগুলো শোনা উচিত। মনে রাখতে হবে, ব্রেক্সিট কোনো ‘টিভি শো’ নয়, যদিও
- ইউএইর পর্যটন খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে ২৪ হাজার
- জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যর্থ বৈশ্বিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো
- বন্ধ হয়ে গেল ইউরোপের বৃহত্তম গ্যাস ক্ষেত্র
- একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় রাজি নন জর্জিও আরমানি
- সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে
- প্রধান কয়েকটি বাজারে মূল্য কমিয়েছে টেসলা