প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অনপেক্ষ মূল্যায়ন

এম সিরাজুল ইসলাম

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সম্প্রতি এক শীর্ষ বৈঠকে ভারত আবারো যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। - অক্টোবর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে। হায়দরাবাদ হাউজে আনুষ্ঠানিক সভা শেষে ৫৩ দফার যে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই তা বাংলাদেশের জন্য খুব একটা আশা বয়ে আনেনি। যেকোনো ব্যক্তিবিশেষ, এমনকি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যারা আংশিক ধারণা রাখেন, তারা জানেন দুই দেশের সীমান্তবর্তী নদী থেকে পানি ভাগাভাগির বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ব্যতীত গঙ্গা নদীর ওপর ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঁধটি চালু করার ফলে দুই দেশের মধ্যে নীরস সম্পর্ক তৈরি হয় এবং কয়েক দশক ধরে অবস্থা বজায় থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশের জন্য গঙ্গার পানির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন। তিনি সুস্পষ্টভাবেই বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের বিষয়টি মূলত ধরনের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর নির্ভর করে, তাছাড়া ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড় কর্তৃক এটি স্বীকৃতও হয়েছিল। তাই কয়েক দশকজুড়ে স্থবিরতার পর গঙ্গা চুক্তি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নতুন সম্পর্কের দরজা উন্মোচন করে। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনা একতরফাভাবে নয়াদিল্লিকে সুরক্ষা প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন, যার ধারাবাহিকতায় ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করা হয়। তাছাড়া তিনি অন্যান্য নদী বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধা করে দেন, যদিও তিনি জানতেন যে সাধারণ নদীগুলোর ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে না এলে আবহাওয়া জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবগুলো বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

২০০৯ সালে সরকারের নতুন মেয়াদের শুরুতে গঙ্গা চুক্তির মতোই ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিকে তাই তিনি আলোচনার টেবিলে রেখেছিলেন। শেখ হাসিনা আশা করেছিলেন, ধরনের একটি চুক্তি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীকে ঘিরে পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হবে। তাছাড়া পরবর্তীতে তিনি ভারতের সঙ্গে অন্যান্য নদী বিষয়ক চুক্তিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন এবং আবহাওয়া জলবায়ুগত পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো মোকাবেলায় সক্ষম হবেন। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় টেকসই সম্পর্কের লক্ষ্যে, যা কেবল বাংলাদেশের অসীম শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির জন্যই লাভজনক হয়েছেনয়াদিল্লির সঙ্গে সুরক্ষা পরিবহন ট্রানজিট-বিষয়ক চুক্তিতে আসার মাধ্যমে শেখ হাসিনা বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন।

যদিও খারাপ কিছুই ঘটেনি। তবে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরকালীন ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন চুক্তিটি স্বাক্ষর করতে যাবেন, ঠিক তার কিছু আগে প্রায় শেষ মুহূর্তে দিল্লির পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। চুক্তি প্রত্যাহারের দায় পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাঁধে চাপিয়ে বলা হয় যে, ভারতীয় সংবিধান অনুসারে নদীর পানি একটি প্রাদেশিক বিষয়, আর মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশকে পানি দেয়ার ব্যাপারে অসম্মতি জানিয়েছেন। যুক্তিটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না, কারণ একই সংবিধানে কেন্দ্রের কাছেও ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, প্রদেশগুলো বাজেট বাস্তবায়ন থেকে অর্থপ্রাপ্তি, রাজস্ব আদায়সহ নানা বিষয়ে কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। কেন্দ্র চাইলে এসব সুবিধা রহিতকরণের চাপ প্রয়োগ করে নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে। এমন বহু উদাহরণ আছে। তাছাড়া প্রদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্রের হাতে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন