প্রযুক্তিনির্ভর টেকসই উন্নয়নে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে বাংলাদেশ যখন টেকসই উন্নয়নের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগটাও হওয়া উচিত অবারিত। বাংলাদেশে প্রথাগত প্রচলিত ধারণার শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ ঝরে পড়া মানুষের সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। অন্যদিকেগণশিক্ষাতথ্যপ্রযুক্তিবিষয় দুটিকে পাশাপাশি দেখার চেষ্টা করলে তা অনেকটা অসম্ভবের নামান্তর হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু এমনি এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেবাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নানা সংকট সমস্যা পেরিয়ে আজ বাংলাদেশের প্রায় লাখ ৩৩ হাজার ৬১৫ বা তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীর কাছে এটি আস্থার এক নাম। উন্মুক্ত দূরশিক্ষণের কথা বলতে গেলে মূক তথা ম্যাসিভ অনলাইন ওপেন কোর্সেসের সফল প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করা যায় এখানেই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বিশেষ ধরনের শিক্ষার প্রচলন ঘটতে দেখা গেছে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে। বলতে গেলে ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্স (ওইআর) আন্দোলনের আওতায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা করেছিল। লক্ষ্য নির্ধারণের শুরুতেই বলা হয়েছিল শিক্ষাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার কথা। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ যদি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ অনুভব করে, বাউবি তাকে তার স্বপ্নপূরণের প্রতিটি পদক্ষেপে সব ধরনের সহায়তা করবে।

স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয় এর শিক্ষা খাত নিয়ে। বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষার আলো সমভাবে পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়াটা অত সহজ ছিল না তখন। বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত গঠনমূলক চিন্তা করতে গিয়েই প্রথম বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনুভূত হয়। তবে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা দেখি, এর বহু আগে ১৯৫৬ সালের দিকেই প্রথমবারের মতো চিন্তা করা হয়েছিল ধরনের একটি উন্মুক্ত শিক্ষার বিকাশ নিয়ে। তখন ২০০টির মতো বেতার রিসিভার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের মধ্য দিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা তখন থেকে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত একটি গ্রহণযোগ্য বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষাপদ্ধতি দাঁড় করানোর উদ্যোগটা অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছিল। এরপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল সেল গঠন করা হলে ১৯৬২ সালের দিকে কোনোক্রমে বিকাশ ঘটতে দেখা যায় কথিত অডিও ভিজ্যুয়াল এডুকেশন সেন্টারের। তবে এর উপযুক্ত গঠন প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটা দেখার অনেক বাকি ছিল, অন্তত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে নিয়ে তেমন কোনো কার্যকর চিন্তাও হতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণ করেন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। সেখানে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তবে তখন শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে নতুন করে যে চ্যালেঞ্জ দেখা গিয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের জন্যই মূলত ১৯৭৮ সালের দিকে বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্কুল ব্রডকাস্টিং পাইলট প্রকল্প হাতে নিতে দেখা যায়। ১৯৮৩ সালের দিকে পাইলট প্রকল্প থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইএমটি) প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এনআইইএমটি পরবর্তীকালে বদলে গিয়ে রূপ নেয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিস্ট্যান্স এডুকেশনে (বিআইডিই) বিভিন্ন ধরনের অডিও ভিজ্যুয়াল উপকরণ তৈরির পাশাপাশি এই বিআইডিই তখন ব্যাচেলর অব এডুকেশন তথা বিএড প্রোগ্রাম চালু করেছিল দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে। বিআইডিই প্রোগ্রামের সাফল্য একটা পর্যায়ে এসে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের অনুপ্রাণিত করে। এরপর ১৯৯২ সালের দিকে চিন্তা আলোর দেখা পায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেবাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৯২ (Bangladesh Open University Act 1992)’ পাসের মধ্য দিয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন