দারিদ্র্য গবেষণায় নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

আব্দুল বায়েস

দারিদ্র্য অর্থনীতির নোবেল স্বীকৃতি নিয়ে বিদেশে বাসরত জাবির প্রাক্তন ছাত্র ওসমান রহমানের ফেসবুকে দেয়া সারাংশটি হুবহু রকম: বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে পরীক্ষামূলক প্রায়োগিক উপায়ের নিখুঁত ব্যবহারের জন্য বছর অর্থনীতিতে যে তিনজন অর্থনীতিবিদকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, তারা হলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি এস্তার দুফলো ( দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির অধ্যাপক) এবং মাইকেল ক্রেমার (যিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)

পুরস্কারের মাধ্যমে ব্যষ্টিক অর্থনীতির যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্বীকৃতি পেয়েছে সেগুলো হলো: . মানবিক ব্যবহারের কার্যকারণিক প্রায়োগিকতা, () অসাম্য আর দারিদ্র্যের অর্থনৈতিক সমাধান এবং () সামষ্টিক উন্নয়ন সমস্যার ব্যষ্টিক পর্যায়ের ব্যবহারিক সমাধান।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ক্লাসের শীর্ষ ছাত্র অভিজিৎ ব্যানার্জিজনশ্রুতির অর্থনীতিশীর্ষক তার প্রথম তাত্ত্বিক গবেষণাপত্রে যে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা ছিল—‘এই জনশ্রুতি যদি সঠিক হয়, তাহলে এটা আগে আমি শুনিনি কেন?’ মৌলিক প্রশ্নটির প্রাসঙ্গিকতা আজকের সর্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উপসংহার হচ্ছে, গুজবে সময় নষ্ট করবেন না!

ভারতের হায়দরাবাদ অঞ্চলে প্রান্তিক জনগণের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের অর্থনৈতিক তাত্পর্য নিয়ে পরিচালিত ব্যানার্জি-দুফলোর গবেষণায় প্রদর্শিত হয় যে উদগ্র দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের ইতিবাচক ভূমিকা থাকলেও এটা কোনো অলৌকিক ব্যবস্থা নয়। ঋণের বহুল ব্যবহার দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত গণদারিদ্র্য নিরসন সম্ভব কিন্তু ব্যাপক দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে যে অব্যাহত বিতর্ক বিদ্যমান, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ব্যানার্জি-দুফলোর গবেষণা তার কিছুটা নিরসন করতে সমর্থ হবে বলে আমার ধারণা।

ভারতের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ওপর সে দেশে ১৯৯৩ সালে যে সাংবিধানিক সংশোধন করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এস্তার দুফলোর গবেষণায় প্রামাণিত হয়, রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণে নারীদের অংশগ্রহণ অনুন্নত দেশে উন্নয়নশীলতার সহায়ক।

অধ্যাপক ক্রেমারের একটি গবেষণাপত্রের শিরোনাম হচ্ছেউন্নয়নের -রিং তত্ত্ব উন্নয়ন তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় রকম। আমেরিকার মহাকাশযান চ্যালেঞ্জার উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিধ্বংস হয়েছিল। পরবর্তী গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছিল যে বিশেষ তাপমাত্রায় সেই মহাকাশযানের -রিং নামের কিছু যন্ত্রাংশ ঠিকমতো কাজ করেনি, ফলে সম্পূর্ণ আকাশযানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ফলাফল থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর ক্রেমার উন্নয়নের রকম একটি তত্ত্ব উপস্থাপনা করেন, যেখানে প্রমাণিত হয় যে দেশের সামষ্টিক উন্নয়নের জন্য ব্যষ্টিক পর্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেনিয়ার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সে দেশের অর্থনৈতিক সার্বিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্কের ওপর তার প্রায়োগিক গবেষণা যুগান্তকারী।

অর্থনীতির নোবেলজয়ী ত্রিরত্নকে অভিনন্দন!

দুই

সম্ভবত অনেকের অজানা যে প্রতি বছর একটি বিশেষ দিন দারিদ্র্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত একটা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে হাজির হয়। সেই দিন ছিল ১৭ অক্টোবর এবং বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়Acting together to empower children, their families and communities to end povertyপ্রসঙ্গত, স্মরণ করা যেতে পারে যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) সর্বস্থানে সর্বপ্রকার দারিদ্র্য নিরসনের তাগিদ দেয়।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য নিরসন দিবসের একটা ছোট ইতিহাস না বললেই নয়। ১৯৪৮ সালে যেখানে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়, ১৯৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর প্যারিসের সেই জায়গায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটেছিল। সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল চরম দারিদ্র্য, সহিংসতা ক্ষুধার শিকার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রথমবারের মতো ওই সমাবেশ থেকে ঘোষণা আসে যে দারিদ্র্য হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন।  ১৯৯২ সালে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন