ঋণখেলাপির অজুহাতের ব্যবচ্ছেদ

ড. এস এম আবু জাকের

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ মঞ্জুর করার সময় মঞ্জুরিপত্রে অনেকগুলো শর্ত সন্নিবেশ করে, যা ঋণগ্রহীতা পালন করতে বাধ্য। সে রকম একটি শর্ত হলো, বন্ধককৃত জমি বা দালানে একটি সাইনবোর্ড টানাতে হবে, যাতে লেখা থাকবেএই জমি/ইমারত অমুক ব্যাংকের অমুক শাখায় দায়বদ্ধ শর্ত মেনে নিয়েই ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণ গ্রহণের পর সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য যখন ব্যাংক উদ্যোগ নেয়, তখন ঋণগ্রহীতা ওই সাইনবোর্ড লাগাতে দেন না। অনেক সময় জোরজবরদস্তিভাবে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও পরের দিন দেখা যায়, ওই সাইনবোর্ডের অস্তিত্ব নেই। ম্যানেজার ব্যাপারটা সম্পর্কে ঋণগ্রহীতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উত্তরে তাকে বলা হয়, এতে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ন হয়, এলাকায় তার যে প্রভাব-প্রতিপত্তি, ইজ্জত-সম্মান আছে, তাতে আঘাত আসে। লজ্জা সংবরণের জন্য গ্রাহক নিজেই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেন। তখন ব্যাংকের শর্ত পালনের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে বচসা চলে। ব্যাংক থেকে বলা হয়, ‘আপনি ওই শর্ত মেনে নিয়েই ঋণ গ্রহণ করেছেন, তাই সাইনবোর্ড লাগাতেই হবে।অন্যদিকে গ্রাহকের দাবি, ‘আমি তো অর্থ আত্মসাৎ করব না, আমাকে বিশ্বাস করেই তো ঋণ দিয়েছেন, এখানে সাইনবোর্ডের দরকার কী? শুধু শুধু আমাকে লজ্জা দিয়ে ব্যাংকের লাভ কী?’ প্রকৃতপক্ষে বন্ধককৃত সম্পত্তি যাতে গ্রাহক অন্য কারো কাছে দায়বদ্ধ কিংবা বিক্রি করতে না পারেন, সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজটা ব্যাংক করে।

আবার এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। কোনো কোনো গ্রাহক ঋণ গ্রহণ না করেই ম্যানেজার সাহেবকে জানিয়ে রাখেন, ‘ভাই, আমার অমুক জমিটি আপনার ব্যাংকে বন্ধক আছে লিখে ওই জমির ওপর একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছি।ম্যানেজার সাহেব এর হেতু কী জিজ্ঞেস করলে বলা হয়, ‘আমার জায়গার ওপর ভূমিদস্যুদের চোখ পড়েছে, তাছাড়া চাঁদাবাজির জন্যও আর পেরে উঠতে পারছি না, তাই চিন্তা করে দেখলাম সাইনবোর্ডই রক্ষাকবচ। ভূমিদস্যুরা মনে করবে ওই জায়গা যেহেতু বন্ধককৃত, তাই ওখানে নজর দেয়ার দরকার নেই; চাঁদাবাজরা মনে করবে বন্ধককৃত জায়গায় হাত দিলে আবার কোথায় না কোথায় রিপোর্ট হয়ে যায়!’ অর্থাৎ ব্যাংকের সাইনবোর্ড কেউ সরিয়ে ফেলে লজ্জা সংবরণ করেন, আবার কেউ কেউ সাইনবোর্ড টানিয়েই অন্যের কাছে লজ্জা বা ভীতি সৃষ্টি করেন।

অন্য একটি প্রসঙ্গে আসা যাক। জনৈক ঋণগ্রহীতার পরপর কয়েকটা কিস্তি খেলাপ হলে ব্যাংক তার বাসায় চিঠি দিয়ে তাগাদা দেয়। বাসায় স্ত্রী চিঠিটা পড়ে জানতে পারে ব্যাংকে স্বামীর অনেক টাকার ঋণ। স্বামী বাসায় ফিরলে চিঠিটা স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, ‘ব্যাংকে যে এত টাকার ঋণ আছে, তুমি তো বিয়ের আগে বা পরে কোনো দিনই আমাকে বলোনি। এখন তো দেখছি তোমার সম্পদের তুলনায় লোন অনেক বেশি। আর কয়টি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছ তা তো জানি না।তার ব্যক্তিগত চিঠি খুলে ফেলার কারণে স্ত্রীর ওপর যে রাগ ঝাড়তে পারেননি তিনি, ব্যাংকে এসে সে রাগটা ঝাড়লেন ম্যানেজারের ওপর। বললেন, ‘কিস্তির টাকার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন, ফোনে আমাকে বললেই হতো।ম্যানেজার বললেন, ‘ফোনে তো আপনাকে পাওয়া যায় না। তাছাড়া কিস্তি খেলাপ হলে চিঠি দেয়া ব্যাংকের দায়িত্ব।গ্রাহক বললেন, “ওই চিঠি দিয়ে তো আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, স্ত্রীর কাছে আমার মানসম্মান বলে কিছুই থাকল না, লজ্জায় তো আমি ওর কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। স্ত্রী কী বলে জানেন, বিয়ের আগে নাকি আমার সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্ট নিয়েকবু

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন