বাজেটের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়

রাজস্ব দুর্বলতা কাটাতে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে

রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সন্দেহ নেই, অর্থনীতি গতিশীল হলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বাড়বে। তবে তার আগে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা রোধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। প্রশাসনকে আরো গতিশীল রাজস্ব ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিসহ যাদের কাছে বিপুল অংকের রাজস্ব পাওনা রয়েছে, তা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব আহরণ হয়। অর্থনীতিতে বিশেষত বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব না পড়লে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাবে।

রাজস্ব ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য এনবিআরকে নতুন করদাতা সংগ্রহে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাত্ক্ষণিকভাবে এনবিআর কর্মকর্তাদের অভিযানে ইটিআইএন অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়াতে হবে। বছরের শুরু থেকেই নামিদামি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, উৎসে রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে গুরুত্ব বাড়ানো, আমদানি-রফতানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রমে তদারক জোরদার করা প্রয়োজন। রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি খাতওয়ারি করদাতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। গোয়েন্দা তত্পরতা বাড়ানোর পাশাপাশি এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সততা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম গ্রহণে আইন বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কীভাবে সহায়তা জোগাতে পারে, তার পথ অনুসন্ধান প্রয়োজন। বন্ড কার্যক্রমে এনবিআরের গোয়েন্দা শাখার নজরদারি বাড়াতে হবে। সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আইনকানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা স্বচ্ছতাও বাড়াতে হবে।

রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে বকেয়া কর আদায়, ঝুলে থাকা আর্থিক খাতের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিসহ কার্যকর সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। -সম্পর্কিত কয়েক হাজার মামলা রয়েছে। আর এসব মামলা বড় করদাতাদের। অপ্রিয় হলেও বলতে হয়, পুঁজিবাদী অর্থনীতির দুটি সর্বসম্মত তত্ত্ব তথা আয় সম্পদের বৈষম্য প্রবৃদ্ধির সহায়ক এবং করহার বাড়ালে রাজস্ব বাড়েএটি এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেকেই এখন বলছেন, বিদ্যমান আয় সম্পদের বিপুল বৈষম্য প্রবৃদ্ধির প্রতিবন্ধক। করহার বাড়ালে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা দুর্নীতি বাড়ে। ফলে কর রাজস্ব হ্রাস পায়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে বড় আর্থিক অনিয়ম কর ফাঁকির জন্য অপরাধীদের বড় জরিমানা, এমনকি কারাবাসও করতে হয়। আমাদের দেশের আইনে থাকলেও তা কার্যকর হয়েছে, এমনটি শোনা যায় না। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম শুল্ক ভবনে এক কর্মকর্তা শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা তার কক্ষে ভাংচুর চালায়। এক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সৎ সরকারি কর্মকর্তাকেই শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। ধরনের আচরণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অনুকূল নয়।

রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন না হলে তা দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের জোগান বিঘ্নিত হতে পারে, অন্যদিকে সরকার ২০২১ সাল নাগাদ কর-জিডিপি ১৪ শতাংশে উন্নীত করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সে প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন