মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর্থিক হিসাব দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এবার এ-সংক্রান্ত এমন কিছু নথি প্রকাশ পেয়েছে, যা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগটি আরো জোরালো করে তুলবে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক শহরের সম্পত্তি করসংক্রান্ত নতুন নথিতে ব্যাংকঋণের জন্য ট্রাম্পের প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার এবং অবৈধভাবে সরকারি কর ফাঁকি দেয়ার কিছু প্রচেষ্টার তথ্য উঠে এসেছে। ফলে ফৌজদারি মামলা ও জরিমানার মুখে পড়তে পারেন তিনি। খবর আইবি টাইমস ও বিজনেস ইনসাইডার।
বুধবার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংগঠন
প্রোপাবলিকা এ বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রোপাবলিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের
নতুন প্রকাশিত কর নথিতে বেশকিছু অসামঞ্জস্য দেখা গেছে, যা
আর্থিক প্রতারণার দিকেই নির্দেশ করছে বলে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
প্রোপাবলিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে
ট্রাম্পের সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার কর ফাঁকি দেয়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর চিত্র
উঠে এসেছে। ঋণ পেতে ও কর ফাঁকি দিতে ট্রাম্প তার নিউইয়র্কের সম্পত্তিগুলোকে
ঋণদাতাদের কাছে বেশি মূল্যের দেখিয়েছেন,
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যের কর
কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্য কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
২০১৮ সালে ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত
আইনজীবী মাইকেল কোহেন প্রেসিডেন্টের অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, সূত্রের
হাতে প্রাপ্ত নথিগুলো সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কর্তৃপক্ষের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার
সময় কোহেন বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি,
যখন নিজের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন পড়ত তখন
ট্রাম্প তার মোট সম্পদের মূল্য বাড়িয়ে দিতেন আবার রিয়েল এস্টেট করের অংক কমাতে
সম্পদের মূল্য কমিয়ে দিতেন।
নিউইয়র্কের ফ্রিডম অব ইনফরমেশন ‘ল’-এর
আওতায় প্রোপাবলিকা ট্রাম্পের সম্পত্তি করের সরকারি নথি হাতে পেয়েছে। সংস্থাটি
ট্রাম্পের কর তথ্যের সঙ্গে প্রকাশিত ঋণের রেকর্ডগুলোর তুলনা করে দেখেছে। ট্রাম্পের
অন্যতম ঋণদাতা সংস্থা ল্যাডার ক্যাপিটাল মর্টগেজ-ব্যাকড সিকিউরিটিজের অংশ হিসেবে
ট্রাম্পের সম্পত্তির ঋণ বিক্রি করে দেয়ার সময় ঋণের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ল্যাডার
ক্যাপিটালের একজন নির্বাহী হলেন জ্যাক উইজেলবার্গ, যিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনে দীর্ঘদিন
ধরে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা
(সিএফও)
হিসেবে কর্মরত অ্যালেন উইজেলবার্গের ছেলে।
প্রোপাবলিকা নিউইয়র্ক শহরে ট্রাম্পের
চারটি সম্পত্তির রেকর্ডের অংশ হাতে পেয়েছে। এসব সম্পত্তি হলো ট্রাম্প
ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার,
৪০ ওয়াল স্ট্রিট, ট্রাম্প টাওয়ার ও ১২৯০ এভিনিউ অব দি
আমেরিকাস।
এর মধ্যে ৪০ ওয়াল স্ট্রিট ও ট্রাম্প
ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ারের কর রেকর্ডে তথ্যের অসংগতি প্রশ্ন তৈরি
করেছে। এ দুটি ভবনেই ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পুনঃঅর্থায়ন করা হয়, যখন
ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। প্রোপাবলিকা জানিয়েছে, ৪০
ওয়াল স্ট্রিটের জন্য পাওয়া ১৬ কোটি ডলার ঋণ সে সময় ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে
বড় ঋণ ছিল। ল্যাডার ও জ্যাক উইজেলবার্গের সহায়তায় ট্রাম্প এ ঋণ পেলেও এজন্য মিথ্যা
ও অবৈধ তথ্য ব্যবহার করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে ট্রাম্প ঋণদাতাদের কাছে ভবন থেকে যে
পরিমাণ ভাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন,
তা ওই বছর কর কর্তৃপক্ষকে দেয়া তথ্যের প্রায়
দ্বিগুণ।
৪০ ওয়াল স্ট্রিটের জন্য ট্রাম্প
পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে কম সুদে ১০ বছর মেয়াদি ঋণ পান বলে প্রোপাবলিকা জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কর
ও ঋণ তথ্যের মধ্যে সংখ্যার পার্থক্য থাকার বৈধ কারণ থাকতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের
ক্ষেত্রে বেশকিছু পার্থক্যের কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।
রেকর্ডগুলো পর্যবেক্ষণের পর
ফিন্যান্সিং বিশেষজ্ঞ ও মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির রিয়েল স্টেট অধ্যাপক
কেভিন রিয়োরডান বলেন, দেখে মনে হয় আসলে দুই সেট লেজার বই ছিল। সম্ভবত একটি বই কেবল কর
কর্তৃপক্ষের জন্য, আর অন্য সেটটি ঋণদাতাদের জন্য রাখা হয়েছে।